গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
টাটা মোটরসকে ৭৬৫.৭৮ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিল্পোন্নয়ন নিগমকে। সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা বন্ধের প্রেক্ষিতে তিন সদস্যের সালিশি আদালত (আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনাল) এই নির্দেশ দিয়েছে বলে জানিয়েছে টাটা গোষ্ঠী। তাদের আরও দাবি, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ১১ শতাংশ হারে রাজ্য সরকারকে সুদের পাশাপাশি দিতে হবে মামলার খরচ বাবদ ১ কোটি টাকাও। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য জানাচ্ছেন, সরকারের তরফে এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য আইনি পথ খোলা আছে।
সোমবার ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে বিবৃতি জারি করে টাটা জানিয়েছে, “২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর তিন সদস্যের সালিশি আদালতে সিঙ্গুরে অটোমোবাইল কারখানা মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। সর্বসম্মত ভাবে ট্রাইবুনাল, টাটা মোটরসকে ৭৬৫.৭৮ কোটি টাকা দিতে বলেছে। সেই সঙ্গে, ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে পুরো ক্ষতিপূরণ পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ১১ শতাংশ হারে সুদ দিতে বলা হয়েছে।”
এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের কর্পোরেট কমিউনিকেশনের প্রধান সোমদত্তা বসুর সঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনও তথ্য নেই।’’
টাটা গোষ্ঠীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশের খবর প্রসঙ্গে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘রাজ্যের বেকারদের স্বপ্ন ভাঙার পেনাল্টি দিতে হচ্ছে। শুধু ওই টাকা নয়। সঙ্গে ১১ শতাংশ সুদও দিতে হবে। অঙ্কটা দাঁড়াবে ১৬০০ কোটি টাকার বেশি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এমনিতেই রাজ্য সরকারকে ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। তার পর এই টাকাও মেটাতে হবে।’’
২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে বিপুল জয় পাওয়ার পর হুগলির সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো গাড়ি কারখানা প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। টাটাকে এ বাবদ ১০০০ একর জমি দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিঙ্গুরে গাড়ি প্রকল্প গড়তে পারেনি টাটা। গাড়ি প্রকল্প যখন ব্যর্থ হল, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার টাটার কাছে জমি ফেরত চেয়ে পাঠায়। টাটা গোষ্ঠী জমি ফেরাতে সম্মত হয়। পাশাপাশি, জমি ফেরানো বাবদ খরচ দাবি করে রাজ্য সরকারের কাছে। জমির দামের সঙ্গেই সেই খরচের অন্তর্গত ছিল ওই জমির পিছনে টাটার বিনিয়োগ করা অর্থও। টাটার প্রস্তাবে রাজি হয়নি রাজ্য সরকার। তার পর সেই লড়াই পৌঁছয় আদালতে।