দুবরাজপুর আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অনুব্রত মণ্ডলকে। নিজস্ব চিত্র।
ইডি দিল্লি নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেতেই এক দিনের পুরনো মামলায় দুবরাজপুর আদালতে পেশ করা হল অনুব্রত মণ্ডলকে। মঙ্গলবার সকালেই অনুব্রতকে নিয়ে দুবরাজপুর আদালতের উদ্দেশে রওনা দেয় পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বালিগিরি পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান শিবঠাকুর মণ্ডলকে মারধর করার অভিযোগ রয়েছে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে। মারধর আগে করা হলেও এক দিন আগে অর্থাৎ, রবিবার রাতে অনুব্রতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন শিব। আর সেই মামলাতে মঙ্গলবারই অনুব্রতকে দুবরাজপুর আদালতে তোলা হবে। এই ঘটনায় অনুব্রতকে ১৪ দিনের নিজেদের হেফাজতে চাইতে পারে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
পুলিশ সূত্রে খবর, অনুব্রতকে দুবরাজপুর আদালতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসানসোল সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের তরফে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশের পক্ষ থেকে অনুব্রত মণ্ডলকে দুবরাজপুর আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অভিযোগকারী শিবের দাবি, জোর করে অনাস্থা এনে তাঁকে পঞ্চায়েত প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেন অনুব্রত। কিন্তু ছ’মাসের মধ্যে আবার তিনি পঞ্চায়েত প্রধান হন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তিনি ৫টি টিকিট চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁকে সেই টিকিট দেওয়া হয়নি। তার পর থেকে শিব ‘রাগে ফুঁসছিলেন’ বলেও জানিয়েছেন। দল ছেড়ে দিয়ে অন্য দলে যোগ দেওয়ার কথাও চিন্তা করেন তিনি।
শিব বলেন, ‘‘দল ছাড়ব বলে ভাবছি, অনুব্রতের কানে এই কথা পৌঁছতেই আমাকে দুবরাজপুর তৃণমূল পার্টি অফিসে ডেকে পাঠানো হয়। আমি দলে সম্মান পাচ্ছি না এবং তাই দল ছাড়ার কথা ভাবছি, এই কথা বলতেই উনি (অনুব্রত) আমার গলা টিপে ধরেন এবং প্রাণে মারার চেষ্টা করেন।’’
কিন্তু দেড় বছর আগের সেই ঘটনায় অভিযোগ কেন এখন জানালেন ওই তৃণমূল নেতা? তিনি বলেন, ‘‘অনুব্রতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে যাওয়া কঠিন ব্যাপার। উনি বাইরে থাকলে আমি অভিযোগ দায়ের করতে পারতাম না। কিন্তু ওঁকে এখন জেল হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাই এই সুযোগেই আমি অভিযোগ দায়ের করি।’’ অভিযোগ করার পর থেকে তিনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন শিব।
ঘটনাচক্রে, সোমবারই গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে জেরা করার অনুমতি পেয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। এই বিষয়ে গত শনিবারই দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে শুনানি হয়েছিল। বীরভূমের দাপুটে নেতাকে দিল্লিতে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চেয়েছিল ইডি। শুনানি শেষ হলেও রায় ঘোষণা স্থগিত ছিল। সোমবার কোর্ট সেই রায় ঘোষণা করে জানিয়েছে, প্রয়োজনে অনুব্রতকে রাজধানীতে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে ইডি। কিন্তু দিল্লি যাওয়ার আগে হঠাৎ করে অনুব্রতকে অন্য মামলায় আদালতে পেশ করানোকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
সোমবার আদালতের তরফে অনুব্রতকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিলেও আসানসোল সংশোধনগার কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, তাঁদের কাছে এই অর্ডারের কপি এখনও এসে পৌঁছয়নি। জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, নির্দেশ এলেই অনুব্রতকে দিল্লিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। ইডি সূত্রে খবর, মঙ্গলবারই অর্ডারের নথি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের হাতে এসে পৌঁছনোর কথা। কিন্তু তার আগেই অনুব্রতকে নিয়ে যাওয়া হল দুবরাজপুর আদালতে।
এখন যদি দুবরাজপুর আদালতের বিচারক অনুব্রতকে পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন, তা হলে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতিকে এই মুহূর্তে দিল্লির আদালতে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়বে ইডি।