ইনহেলার নিচ্ছেন অনুব্রত মণ্ডল। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগ, তিনি রাস্তায় ‘উন্নয়ন’ দাঁড় করিয়ে রেখে বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন করাতে দেননি গত পঞ্চায়েত ভোটে। অনুব্রত মণ্ডল বিলক্ষণ জানেন সে-কথা। তাই আরও এক বার বললেন, তিনি চান সব দল আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক। এমনকি, মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে কোথাও ব্লক অফিস ঘেরাও করে রাখা হলে ‘পুলিশ পিটিয়ে তা তুলে দেবে’ বলেও হুঁশিয়ারি দিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি!
গত কয়েক মাসে একাধিক মামলায় বারবার সিবিআই তলবে কিছুটা বিব্রত অনুব্রত। তার উপরে শরীরও ভাল নয়। গত প্রায় দেড় মাস ধরে দলের সাংগঠনিক কাজ সে-ভাবে দেখাশোনা করতে পারছিলেন না। কলকাতা-বোলপুর যাতায়াত করতে হয়েছে বারবার। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে রেখে তাঁর নির্দেশ মতো জেলায় অঞ্চল-ভিত্তিক কর্মী সম্মেলন শুরু হলেও অনুব্রতের অনুপস্থিতির কারণে সভায় তেমন ভিড় হচ্ছিল না। ফলে অস্বস্তি বাড়ছিল তৃণমূলের অন্দরে। এমন অবস্থায়, মঙ্গলবার বোলপুরে দলীয় কার্যালয়ে চেনা মেজাজেই ধরা দিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি। চেনা মেজাজেই জানালেন, চেনা ময়দানে ফের তিনি নামতে চলেছেন। পুজোর পর ব্লকে ব্লকে জনসভা হবে, এবং সেই সব সভায় তিনি হাজির থাকবেন।
২১ জুলাই, দলের শহিদ দিবসকে সামনে রেখে সিউড়ি মহকুমা এলাকার নেতাকর্মীদের নিয়ে এ দিন বৈঠকে বসেন অনুব্রত। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী অন্য নেতারা। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই বৈঠকে পঞ্চায়েত ভোট স্বচ্ছ ভাবে করার নির্দেশ দেন জেলা সভাপতি। কোথাও যাতে জোরজুলুম না-করা হয়, তা কর্মীদের জানিয়ে দেন। সেই প্রসঙ্গেই তাঁর হুঁশিয়ারি, মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে যদি কোথাও ব্লক অফিস ঘেরাও করে রাখা হয়, তাহলে পুলিশ পিটিয়ে তা তুলে দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে দল দায়িত্ব নেবে না বলেও তিনি স্পষ্ট করে দেন।
বৈঠক শেষে দীর্ঘদিন পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জেলা সভাপতি বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমি চাই সব দল মনোনয়ন জমা করুক। আমি লড়তে চাই।’’ বিজেপি-কে তীব্র কটাক্ষে ভরিয়েছেন অনুব্রত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিধানসভা নির্বাচন গেল, তারা( বিজেপি) কী পেরেছে? পুজোর পরই প্রতিটি ব্লকে ব্লকে আগের মতো জনসভা হবে। একুশে জুলাই আমি ধর্মতলা যাব।’’ তাঁর দাবি, বিজেপি রাজনীতি করছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, ওদের লোকজন নেই। সিবিআই তলব প্রসঙ্গে তাঁর অভিযোগ, সংগঠন গত ভাবে বিজেপি লড়তে পারছে না বলেই এজেন্সি দিয়ে এই ধরনের কাজ করাচ্ছে। তাঁর পরামর্শ, ‘‘আমি যদি এখন বিজেপিতে যাই, তা হলে তৃণমূলের লোক আরও সক্রিয় হবে। তাই সংগঠনের লোক তৈরি করে রাজনীতি করতে হয়। সারা জীবন লড়াই করেই উঠে এসেছি, লড়াই হোক রাজনৈতিক ভাবে।’’
শহিদ দিবসে জেলা থেকে দু’লক্ষ লোক নিয়ে যাওযার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন বলেও অনুব্রত এ দিন জানান। আগামী দিনে বোলপুর ও রামপুরহাট মহকুমা নিয়েও বৈঠক করবেন।