প্রত্যেককেই ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ফর্মে স্বাক্ষর করানো হয়েছিল। ফাঁকা চেকেও সই করানো হয়েছিল। ফাইল চিত্র
এমনিতে তিনি সব্জি বিক্রি করতেন। তবে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে তাঁর ডাক পড়ত আলু-পটল কিনতে নয়। অনুব্রতের দেহরক্ষী সহগল হোসেন তাঁকে ডেকে পাঠাতেন ‘দাদা’কে দলাই মলাই করে দেওয়ার জন্য! ইনি বিজয় রজক। ইডি তার চার্জশিটে জানিয়েছে, এই বিজয়ের নামে একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন অনুব্রত! সেই অ্যাকাউন্টে ঢুকত গরু পাচারের ব্যবসাজাত লাভের লাখ লাখ টাকা।
তবে বিজয় একা নন, অনুব্রতের লাভের টাকায় এমন ব্যাঙ্কের খাতায় বড়লোক হয়েছেন সমাজের নিচুতলার বহু মানুষ, যাঁদের রোজগার হয়তো নামমাত্র কিন্তু তাঁদের নামে থাকা ব্যঙ্ক অ্যাকাউন্টের হিসাব বলছে তাঁরা আদতে লাখপতি—চার্জশিটে এমনই জানিয়েছে ইডি।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, সমাজের নীচুস্তরে থাকা এমন অনেকের নামে বেনামি অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন অনুব্রত। সেই সব অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেই নজরদারদের দৃষ্টি এড়িয়ে তাঁর হাতে পৌঁছত গরু পাচারের টাকা।
অনুব্রতের বিরুদ্ধে চার্জশিটে বিজয়-সহ এই রকম পাঁচ জনের অ্যাকাউন্টের হদিশ দিয়েছে ইডি। দিয়েছে তাদের পরিচয়ও। এঁদের মধ্যে এক জন হলেন ওমর শেখ। তিনি বোলপুর পুরসভার একজন কাউন্সিলর। তবে তার আগে অনুব্রতের বাড়িতেই কাজ করতেন।
ওমর তাঁর বয়ানে জানিয়েছেন, ২০১০ থেকে তিনি তৃণমূলের পার্টি কর্মী। ২০১৫ সালে তিনি কাউন্সিলর হন। অনুব্রত তাঁকে মাসে ১৩ হাজার করে বেতন দিতেন। নিজেকে ‘দাদা’র কাছের লোক বলে পরিচয় দিয়ে ওমর ইডিকে জানিয়েছেন, দাদা অর্থাৎ অনুব্রত যে তাঁর নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন, তা তিনি জানতেন। তিনি বেশ কিছু ফাঁকা চেকে সইও করেছিলেন। কিন্তু কে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করত, তা তিনি জানতেন না।
অর্ক দত্ত নামে প্রাইমারি স্কুলের এক শিক্ষকের নামেও একাধিক অনুব্রত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন বলে দাবি ইডির। এক সময় অর্কও বোলপুর পুরসভায় চুক্তিভিত্তিক কাজ করতেন। বোলপুরে তৃণমূলের দফতরে কম্পিউটার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবেও কাজ করেছেন কিছু দিন। ২০১৭ সালে শিক্ষকের চাকরি পান। ইডিকে অর্ক জানিয়েছেন, তাঁর নামে তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন অনুব্রত এবং সেহগাল।
এ ছাড়াও তৃণমূলের বোলপুরের লোকাল অফিসের কর্মী তাপস মণ্ডল, যিনি নির্মাণের উপকরণের ব্যবসা করতেন এবং দলের কর্মী শ্যামাপদ কর্মকার, যিনি তৃণমূলের দেওয়াল লিখতেন, তাঁদের নামেও খোলা হয়েছিল অ্যাকাউন্ট। ইডি চার্জশিটে সে কথা জানিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে এঁরা প্রত্যেককেই ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ফর্মে সই করানো হয়েছিল। ফাঁকা চেকেও সই করানো হয়েছিল। চার্জশিটে এদের ব্যঙ্ক অ্যাকাউন্টে নগদ জমা দেওয়ার তথ্যও তুলে ধরেছে ইডি। যদিও ইডিকে দেওয়া বয়ানে এঁদের প্রায় প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, অ্যাকাউন্ট খোলার কথা জানলেও তাতে লেনদেনের বিষয়ে কিছুই তাঁদের জানা ছিল না।