আনিস-কাণ্ডে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে প্রেসিডেন্সি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই। বেলা ১টা নাগাদ কলেজ স্ট্রিট মোড় অবরোধ করা হয় মিনিট পনেরো। ছাত্র সংগঠন ইন্ডিপেন্ডেন্ট কনসলিডেশন (আইসি) বিক্ষোভ দেখায় প্রেসিডেন্সিতে।
ছাত্রনেতা আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রতিবাদে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে শুরু হওয়া পড়ুয়াদের মশাল মিছিল। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
দলমত নির্বিশেষে জোট বাঁধছে ছাত্রসমাজ। জোট প্রতিবাদের। হাওড়ার আমতায় ছাত্রনেতা আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর সত্যি কারণ খুঁজে বার করে, অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে বুধবারেও বিক্ষোভ অব্যাহত। আলিয়া, প্রেসিডেন্সি বা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শুধু নয়, মহানগরীর গণ্ডি ছাড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের শোকতপ্ত ক্ষোভ ছড়াচ্ছে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে।
আনিসের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রাজ্য পুলিশ এ দিন আমতা থানার এক হোমগার্ড এবং এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করেছে। তার পরেও আন্দোলন কেন? এই প্রশ্নের মুখে ছাত্রসমাজের দাবি, ওঁরা নিচু তলার কর্মী। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওঁরা কিছুতেই কারও বাড়িতে অভিযানে যেতে পারেন না। তাই এর পিছনে কার নির্দেশ ছিল, সেটাকে সামনে আনতে হবে। সেটা প্রকাশ্যে আসার আগে পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস ক্যম্পাসের পড়ুয়ারা এ দিন বিকেলে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেন। আন্দোলনকারীদের তরফে মিনহাজুল ইসলাম বলেন, “চার জন পুলিশকর্মী সে-রাতে আনিসের বাড়ি যায়। শুনলাম, দু’জনকে ধরা হয়েছে। তা হলে বাকি দু’জন পুলিশকর্মী কোথায় গেল? বাকি দু’জনকেও অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। ওই চার পুলিশকর্মীকে যিনি বা যাঁরা আনিসের বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন, তাঁদেরও চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে হবে।” বিক্ষোভকারী নাসিম নওয়াজ বলেন, “মঙ্গলবার মহাকরণ অভিযানের সময় পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করেছিল। যে-সব পুলিশকর্মী লাঠি চালালেন, তাঁদের শাস্তি হল না কেন?”
বিকেলে আলিয়ার নিউ টাউন ক্যাম্পাস থেকে বেরোনো ছাত্র মিছিলে কয়েক জন শিক্ষকও ছিলেন। মিছিল যায় নারকেলবাগান মোড় পর্যন্ত। আনিসের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ন্যায়বিচারের দাবি জানায় আলিয়ার শিক্ষক সমিতি। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনকে প্রতিবাদে শামিল হওয়ার আবেদন জানিয়েছে তারা।
আনিসের মৃত্যুর প্রতিবাদে মঙ্গলবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল এসএফআই। সেই সময় তাদের সঙ্গে তৃণমূলের শিক্ষাবন্ধু সমিতির বচসা বাধে। তার প্রতিবাদে, আনিস-কাণ্ডে দোষীদের শাস্তির দাবিতে এবং মহাকরণ অভিযানে ছাত্রছাত্রীদের উপরে লাঠি চালানো ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে রাতভর অবস্থান করেন এসএফআই সদস্যেরা। বুধবার বিকেলে ক্যাম্পাসে এসএফআইয়ের প্রতিবাদ মিছিল বেরোয়। সন্ধ্যার মুখে যাদবপুর ক্যাম্পাস থেকে যাদবপুর ছাড়াও বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মশাল মিছিল বেরোয়। মিছিল যায় গোল পার্ক পর্যন্ত। যাদবপুরে এসএফআই নেতা তর্পণ সরকার বলেন, ‘‘কাল সাসপেন্ড হয়েছে। আজ গ্রেফতার। তার অর্থ এই নয় যে, সুবিচার হল। সুবিচারের আগে পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’’
আনিস-কাণ্ডে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে প্রেসিডেন্সি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই। বেলা ১টা নাগাদ কলেজ স্ট্রিট মোড় অবরোধ করা হয় মিনিট পনেরো। ছাত্র সংগঠন ইন্ডিপেন্ডেন্ট কনসলিডেশন (আইসি) বিক্ষোভ দেখায় প্রেসিডেন্সিতে।
আনিসের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের শাস্তি চেয়ে কলেজ স্ট্রিটে বিক্ষোভ দেখায় ডিএসও। তারা রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ দিবস পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন কলেজ, হাজরা, যাদবপুরে মিছিল করে তারা। আলিয়ার পাক সার্কাস ক্যাম্পাসের সামনেও ডিএসও-র বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিল করে আইএসএফ-ও। বিকেলে ভাঙড়ের কাঁঠালিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ঘটকপুকুর পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার মিছিল হয়। স্থানীয় আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তিন-চার হাজার মানুষ তাতে শামিল হন। ভাঙড়-ঘটকপুকুর রোড ও বাসন্তী হাইওয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। আনিস তাঁদের দলেরই কর্মী ছিলেন বলে আইএসএফ নেতৃত্বের দাবি।
নওশাদ বলেন, ‘‘আনিস প্রতিবাদী কণ্ঠ। তাঁর মৃত্যু নিয়ে শাসক দল রাজনীতি করতে চাইছে। এক ছাত্রনেতাকে যে-ভাবে খুন করা হয়েছে, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমরা।’’