আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী আনিস খানের পরিবারের দাবি, শুক্রবার রাতে তাঁকে তিনতলা বাড়ির নীচে পড়ে থাকতে দেখা যায়। অভিযোগ, পুলিশের ছদ্মবেশে দুষ্কৃতীরা এসে তাঁকে খুন করে। আনিসের বাবা সালেম খানের দাবি, জোর করে তিন দুষ্কৃতী ঘরে ঢুকে ছাদে উঠে আনিসকে ছাদ থেকে ফেলে খুন করেছে।
গ্রাফিক— সনৎ সিংহ।
ছাত্রনেতা আনিসের মৃত্যুর সঠিক তদন্তের দাবিতে পথে বাম ছাত্র যুব সংগঠন। আমতা থানা ঘেরাও। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, ভাঙল ব্যারিকেড। সব মিলিয়ে বাম বিক্ষোভ ঘিরে ধন্ধুমার পরিস্থিতি হাওড়ার আমতায়। এ দিকে আমতার ঘটনায় পুলিশকে দ্রুত তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন ডিজি। রবিবারই হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপারকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল ভবানী ভবনে। পুলিশ সুপারের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট নেন ডিজি। ডিএসপি পদমর্যাদার এক আধিকারিক ঘটনার তদন্ত করবেন বলে ভবানী ভবন সূত্রে খবর।
গত বছরের ২৪ মে, পুলিশকে চিঠি লিখে নিজের ও পরিবারের প্রাণ বিপন্ন হতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন আমতার মৃত ছাত্রনেতা আনিস খান। আমতা থানার আধিকারিককে সম্বোধন করে লেখা সেই চিঠিতে আনিস আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, শাসক দলের স্থানীয় নেতারা তাঁর ও তাঁর পরিবারের উপর প্রাণঘাতী হামলা শানাতে পারে। পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ারও আবেদন জানিয়েছিলেন আনিস। কিন্তু অভিযোগ, পুলিশ আনিসের অভিযোগে কর্ণপাত করেনি।
সিবিআই তদন্তের দাবিতেই অনড় আনিসের বাবা। এ দিন আনিসের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য-সহ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক অসিত মিত্র, কংগ্রেস নেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী আনিস খানের পরিবারের দাবি, শুক্রবার রাতে তাঁকে তিনতলা বাড়ির নীচে পড়ে থাকতে দেখা যায়। অভিযোগ, পুলিশের ছদ্মবেশে দুষ্কৃতীরা এসে তাঁকে খুন করে। আনিসের বাবা সালেম খানের দাবি, জোর করে তিন দুষ্কৃতী ঘরে ঢুকে ছাদে উঠে আনিসকে ছাদ থেকে ফেলে খুন করেছে।
কিন্তু যে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে তাঁকে লাগাতার হুমকি, বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ করে পুলিশকে চিঠি দিয়েছিলেন সেই তৃণমূলেরই এলাকার বিধায়ক সুকান্ত পাল অবশ্য জানাচ্ছেন, আনিসের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। মৃত ছাত্রনেতাকে ‘খুবই ভাল ছেলে’ হিসেবেই জানাচ্ছেন তিনি। আমতার তৃণমূল বিধায়ক সুকান্ত বলেন, ‘‘আনিস খুবই ভাল ছেলে। ওঁর মৃত্যুতে আমি ব্যথিত। গতকাল ওঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে এসেছি। আমরা চাই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। দোষীদের শাস্তি হোক। আমরা আনিসের পরিবারকে সব রকম ভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত।’’
এ দিকে আনিসের মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি করছে এসএফআই। পাঁচ দিনের মধ্যে আততায়ীকে না ধরলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাম ছাত্র সংগঠন। আমতা থানা ঘেরাও করে চলছে বিক্ষোভ। বাম ছাত্র-যুবর বিক্ষোভ সামাল দিতে নাজেহাল পুলিশ।
এসএফআই-এর সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস বলেন, ‘‘সুপরিকল্পিত ভাবে আনিসকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। ছেলেটির অপরাধ, সে এলাকায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিল। তৃণমূল এবং বিজেপি-র বিরোধিতা করেছিল। পুলিশ কেন আনিসের দেহের ময়নাতদন্তের সময় পরিবারের কাউকে রাখেনি? বাড়ির লোকজন জানতেনও না। বিষয়টি চেপে দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করেছে পুলিশ। উত্তরপ্রদেশের কায়দায় গণতন্ত্র রোধ করা হচ্ছে বাংলায়। এটা এনকাউন্টার, যেমন সুদীপ্ত এবং মইদুলের ক্ষেত্রে হয়েছিল। এই হত্যার বিচারবিভাগীয় তদন্ত চাই।’’