গ্রাফিক—শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন তাঁদের ঘুম কাড়তে শুরু করেছেন, তখন এ রাজ্যে শাসক সিপিএমের প্রধান তিনি। বিরোধী নেত্রীর আক্রমণের মুখে শাসক দলের ঢাল, পাল্টা আক্রমণেও সামনে ছিলেন তিনিই। সিপিএমের প্রয়াত রাজ্য সম্পাদক সেই অনিল বিশ্বাসের মেয়ে অজন্তার কলমে এ বার ‘অগ্রণী মহিলা রাজনীতিক’ হিসেবে উঠে আসতে চলেছে শাসক মমতার কথা। বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি সংক্রান্ত অজন্তার বিশ্লেষণ তিনটি পর্বে ছাপা শুরু হয়েছে তৃণমূলের মুখপত্রে। তারই মধ্যে আসতে চলেছে তৃণমূল নেত্রীর মূল্যায়নও। বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন শুরু হয়েছে সঙ্গে সঙ্গেই এবং সিপিএম সূত্রের খবর, অজন্তা এই বিষয়ে দলের সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে তাঁর বক্তব্য জানাতে পারেন।
‘বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি’ শীর্ষক এই লেখার প্রথম কিস্তি বুধবার প্রকাশিত হয়েছে তৃণমূলের মুখপত্রে। এই লেখার তৃতীয় পর্বে আগামী শুক্রবার যে অংশ প্রকাশিত হতে চলেছে, তাতে এ রাজ্যের রাজনীতিতে নারীশক্তির বিকাশে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর ভূমিকা বিশেষ ভাবে রয়েছে। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, নারীশক্তির বিকাশের প্রেক্ষিতে নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করে নেত্রী হয়ে ওঠা মমতার যাত্রাপথকে ব্যাখ্যা করেছেন রবীন্দ্রভারতীর ইতিহাসের অধ্যাপক অজন্তা। তৃণমূলের মুখপত্রে তাঁর লেখা দেখা যেতেই চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে। এর পরে মমতা সম্পর্কে তাঁর কী বিশ্লেষণ থাকে, নজর রয়েছে সে দিকেও। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা দলীয় মুখপত্রের ভারপ্রাপ্ত কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘মমতাদি’র এই যাত্রাপথ এক দিক থেকে মহিলাদের ক্ষমতায়নের কথাই বলে। অজন্তার পর্যবক্ষেকণে এই রকম একটা বিশ্লষণ ধরা পড়েছে। তা কোনও দলীয় রাজনীতির গণ্ডিতে বাঁধা নয়।’’
তৃণমূল নেতৃত্ব দলীয় গণ্ডির বাইরের কথা বললেও এমন লেখার অভিঘাত বিদ্ধ করেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটকে। ছাত্র রাজনীতিতে হাত পাকালেও অনিলবাবুর যে বিদূষী কন্যা পরবর্তী পর্যায়ে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক মত জ্ঞাপন থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন দীর্ঘ কাল, তাঁকেই হঠাৎ তৃণমূলের মুখপত্রে কলম ধরতে দেখে স্তম্ভিত রাজ্য সিপিএম নেতৃত্ব! তবে অনিলবাবুর মেয়ে বলেই তাঁরা এই বিষয়ে প্রকাশ্যে জলঘোলা করতে চাইছেন না। মমতা সম্পর্কে তিনি শেষ পর্যন্ত আর কী মূল্যায়ন করেছেন, তা-ও দেখতে চান তাঁরা। প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি অজন্তাও। সিপিএম সূত্রের খবর, কলকাতায় অধ্যাপকদের নিয়ে গঠিত দলীয় একটি কমিটির সদস্য তিনি। সেই কমিটির নজরে বিষয়টি এসেছে। তাদের কাছেই পরে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পারেন অজন্তা।
তৃণমূল সূত্রের খবর, নারীশক্তি নিয়ে বিষয় নির্বাচন অজন্তার নিজেরই। কুণালের বক্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক মত যা-ই হোক না কেন, অনিলবাবুর কন্যা অজন্তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ বহু দিনের। ওঁর এই লেখা সম্পর্কে জানার পরে আমার আগ্রহ ছিল। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী মনে হওয়ায় সেটি দলীয় মুখপত্রের জন্য বেছে নিয়েছি।’’ এক সময়কার রাজ্য সিপিএমের প্রধান অনিলবাবুর মেয়ের কলমে নারীশক্তির বিকাশের উদাহরণ হিসেবে মমতার এই বৃত্তান্তে তৃণমূল কি মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক পথের স্বীকৃতিও দেখছে? কুণাল অবশ্য বলেন, ‘‘লেখকের রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচ্য ছিল না। তা ছাড়া, এই লেখায় কনক মুখোপাধ্যায়, ফুলরেণু গুহ যেমন এসেছেন, তেমনই এসেছেন মমতা।’’