প্রতীকী ছবি।
জোট বেঁধে বিধানসভা ভোটে লড়াইয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়ে রয়েছে। যৌথ কর্মসূচি এখনও ঠিক হয়নি, আসন ভাগাভাগি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনাও হয়নি। অথচ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে ‘মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী’ করে ভোটে নামার পক্ষে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতাদের একাংশ। জোট-প্রক্রিয়ার মাঝে প্রদেশ কংগ্রেসের এমন কার্যকলাপে নতুন করে ধন্দ দেখা দিচ্ছে বাম শিবিরে।
সিপিএম যেমন এক দিকে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার পক্ষেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তেমনই বিভিন্ন জেলা থেকে বিধানসভার আসনওয়াড়ি হিসেব এসে পৌঁছেছে আলিমুদ্দিনে। সব জেলার তালিকা মিলিয়ে রাজ্যে কত আসনে বামেরা লড়তে চায়, তার প্রাথমিক হিসেবও তৈরি। বাম শরিক ছাড়াও কিছু সহযোগী দলকে আসনের ব্যবস্থা করতে হবে সিপিএমকে। তাদের ‘চাপ’ স্বভাবতই বেশি। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনার আগে আসনের দাবি-দাওয়া নিয়ে সিপিএম নেতৃত্ব প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। পক্ষান্তরে, কংগ্রেস শিবিরে নানা বৈঠকে এবং প্রকাশ্যে দাবি উঠতে শুরু করেছে, প্রদেশ সভাপতিকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করতে হবে। জোটের ‘কর্তৃত্ব’ও কংগ্রেসের হাতে দিতে হবে।
প্রদেশ সভাপতিকে ‘মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী’ করার বিষয়ে কংগ্রেস কি অবস্থান চূড়ান্ত করে ফেলেছে? প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) ও মুখপাত্র মনোজ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘দলের নিচু তলার কর্মী, অনেক সাধারণ মানুষ এবং আমারও এটাই মত। অধীরবাবু জনপ্রিয় নেতা। অতীতে রেলমন্ত্রী ছিলেন, এখন লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা। তাঁকে মুখ হিসেবে সামনে রেখে লড়লে বাম ও কংগ্রেস, দু’পক্ষই অক্সিজেন পাবে এবং এই জল্লাদ সরকারকে সরাতে সুবিধা হবে।’’ তা হলে অধীরবাবু কি বিধানসভা ভোটে লড়বেন? মনোজবাবু বলছেন, ‘‘প্রয়োজন হলে ভোটের পরে উপনির্বাচনে দাঁড়াবেন।’’ প্রসঙ্গত, গত লোকসভা ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, কংগ্রেসের ‘শক্ত ঘাঁটি’ মুর্শিদাবাদেই তারা ২২টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১৭টিতে পিছিয়ে।
কংগ্রেস নেতাদের একাংশের দাবি প্রসঙ্গে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘আমাদের তরফে যা করণীয়, করছি। নমনীয়তাও আছে। কিন্তু আসন সমঝোতা করে লড়তে গেলে দু’পক্ষেই কিছু সতর্কতা বাঞ্ছনীয়। এমন কিছু দাবি আগাম ভাসিয়ে দেওয়া উচিত নয়, যা থেকে সহযোগী শিবিরে ভুল বার্তা যায়।’’ তৃণমূলের লোকসভার সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘বাম-কংগ্রেস জোটের সরকার তো কল্পনা! হতে পারে, বিজেপি শিবিরের কাছ থেকে উনি (অধীরবাবু) কোনও বার্তা পেয়েছেন, ভোটের পরে তেমন পরিস্থিতি হলে ওঁকে হয়তো মুখ্যমন্ত্রী করতে চাইবে গেরুয়া শিবির!’’
ভোটের জন্য ঘর গুছোনোর পাশাপাশি উৎসবের মরসুমের ফাঁকে পথে নামার কর্মসূচিও জারি রাখছে বামেরা। শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা ২৬ নভেম্বরের সর্বভারতীয় ধর্মঘটের সমর্থনে এবং কেন্দ্রের কৃষি আইনের প্রতিবাদ-সহ কিছু বিষয়ে আজ, মঙ্গলবারই কলকাতায় মিছিল করছে বামফ্রন্ট ও সহযোগী দলগুলি। কংগ্রেসকে অবশ্য এই মিছিলে ডাকা হয়নি। কারণ, পুজোর মধ্যে বাম নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জানিয়েছিলেন, এআইসিসি-র দেওয়া কিছু কর্মসূচিতে তাঁরা আপাতত ব্যস্ত থাকবেন। আর ভবিষ্যতে যৌথ কর্মসূচি মেনেই তাঁরা মিছিল-সভা চান, সব ঠিক করে ফেলে বামেরা শুধু আমন্ত্রণ জানালে হবে না। সেই আলোচনা ইস্তক কংগ্রেসের দিক থেকে কর্মসূচির খসড়ার অপেক্ষা করছেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রেরা। মনোজবাবু অবশ্য জানাচ্ছেন, দীপাবলির আগে কংগ্রেসের তরফে যৌথ কর্মসূচির খসড়া তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কম।