উত্তাল বাংলাদেশ। —ফাইল চিত্র।
এটা উড়ালপুল, না কি যুদ্ধক্ষেত্র! এত টাকা দিয়ে শেষে এখানে এসে পৌঁছলাম! হোটেল থেকে মহাখালি উড়ালপুলে পৌঁছে প্রথমে এই কথা দুটোই মনে হয়েছিল। তার সঙ্গে জুড়ে গেল আরও একটা চিন্তা, ঢাকা বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রাণ নিয়ে পৌঁছতে পারব তো?
সেই মঙ্গলবার বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ‘সি-ফুড শো’ শেষ হয়েছে। সেখানে এসেছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি ছিলাম ভারত থেকে অন্যতম আমন্ত্রিত। সব ঠিকঠাকই চলছিল। তালটা কাটল তার পরেই। আচমকাই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল গোটা দেশ। হোটেলের ঘরে বসেই খবর পাচ্ছিলাম, বাইরে বেরোনো কার্যত অসম্ভব। অথচ ফিরতে তো হবে, বনগাঁয় নিজের বাড়িতে।
শেষে শুক্রবার রওনা দিলাম মরিয়া হয়েই। গন্তব্য, ঢাকা বিমানবন্দর। সেখান থেকে যশোর হয়ে দেশে ফিরব। এ ছাড়া উপায় নেই। হোটেল থেকে বেরিয়ে অনেক কষ্টে একটা রিকশা পেলাম। সে মহাখালি উড়ালপুলের বেশি যেতে নারাজ। মাত্র দু’কিলোমিটার পথ। তাতেই লাগল ১৭০০ বাংলাদেশি টাকা। উড়ালপুলের কাছে নেমে বুঝতে পারলাম, কেন রিকশা এর বেশি যেতে চায়নি। উড়ালপুলের উপরেই পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বেধেছে তখন। পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়তে শুরু করেছে। উল্টো দিক থেকে ছুটে আসছে ইট-পাথর। সেখানে এক মুহূর্ত দাঁড়ানো মানে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করা। ব্যাগ হাতে প্রাণপণে ছুটলাম অন্য রাস্তার খোঁজে। এরই মধ্যে রাস্তায় চোখে পড়ল সাঁজোয়া গাড়ি। একটা রাস্তায় ঢুকতে যাব, দেখি পথ আটকে দাঁড়িয়ে সেনা। বিদেশি শুনে কিছুতেই সেই রাস্তায় ঢুকতে দিল না।
শেষে অনেক কষ্টে, ঘুরপথে প্রায় চার কিলোমিটার পার হয়ে হেঁটেই পৌঁছলাম বিমানবন্দরে। ঢোকার মুখে দেখি, আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করতে হেলিকপ্টার থেকে জল ঢালা হচ্ছে। হেলিকপ্টার থেকে দড়ি ঝুলিয়ে আশপাশের বাড়ির ছাদে নামছে সেনা।
ঢাকা থেকে বিমানে রাতে যশোরে পৌঁছলাম। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় এটিএম থেকে টাকাও তুলতে পারিনি। যশোরে একটি হোটেলে কাটালাম নির্ঘুম রাত। দিনের আলো ফোটার আগেই তিন হাজার টাকায় গাড়ি ভাড়া করে সোজা সীমান্তে। গাড়ির সামনে লাগানো ‘বিদেশি নাগরিক’ স্টিকার।
সীমান্ত পেরিয়ে নিজের দেশের মাটিতে পা দিয়ে মনে হল, এ বারে বুঝি লম্বা শ্বাস নেওয়া যায়।