—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
যে সব বেসরকারি বাস কোভিডের জন্য চলতে পারেনি তাদের বয়সের ভিত্তিতে বাতিল দু’বছর করে পিছিয়ে দেওয়া হোক। এমনই আবেদন জানানো হল পরিবহণ দফতরে। সম্মিলিত ভাবে এই আবেদনটি জানিয়েছেন তিনটি বেসরকারি বাস সংগঠনের নেতারা। ‘গণ পরিবহণ বাঁচাও কমিটি’ নাম দিয়ে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী ও পরিবহণ সচিব সৌমিত্র মোহনের কাছে এই আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। বুধবার পরিবহণ ভবনে গিয়ে তাঁরা এই দাবিপত্র জমা দিয়েছেন। বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট, জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস অ্যান্ড মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বেসরকারি বাসের সময়সীমা আরও দু’বছর করে বৃদ্ধি করার আবেদন জানিয়েছে।
বাসমালিকদের সংগঠনের মঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে, যে বাসগুলি কোভিডের জন্য চলতে পারেনি তাদের বয়সের ভিত্তিতে বাতিল দু’বছর করে পিছিয়ে দেওয়া হোক। বেসরকারি বাসমালিক সংগঠনের যুক্তি, কোভিড সংক্রমণের সময় যে লকডাউন হয়েছিল, তাতে ওই দু’বছর বাসগুলি রাস্তায় চলাচল করেনি। অথচ এমন অনেক বেসরকারি বাস রয়েছে, যাদের মেয়াদ কাল ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু কোভিডের সময় দু’বছর বেসরকারি বাস রাস্তায় চলাচল না করায় বাসমালিকদের আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে, তা ছাড়া বাসগুলি ওই দু’বছর না চলায় এখনই তা বাতিল করার জায়গায় নেই। সঙ্গে করোনা সংক্রমণের ফলে যে আর্থিক ধাক্কা বেসরকারি বাসমালিকদের সহ্য করতে হয়েছে, তাতে নতুন বাস নামানো অনেকটাই আর্থিক ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বাসমালিকেরা। তাই তাঁরা বসে থাকা বাসের মেয়াদ দু’বছর বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছেন পরিবহণ দফতরের কাছে। বর্তমানে একটি ডিজেল চালিত বাস রাস্তায় নামাতে গেলে তার মূল্য প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। আর ইলেকট্রিক চালিত বাস কিনতে গেলে দাম পড়তে পারে ৬০-৬৫ লক্ষ। করোনা সংক্রমণে যে আর্থিক ধাক্কা বাসমালিকেরা খেয়েছেন, তাতে আগামী কয়েক বছরে এই ধরনের বড় বিনিয়োগ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয় বলেই দাবি করেছেন বাসমালিকেরা।
জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাসের বয়সের মেয়াদ বৃদ্ধির যে দাবি আমরা করেছি তা একেবারেই যুক্তিযুক্ত। ফিরহাদ হাকিম পরিবহণমন্ত্রী থাকাকালীন আমরা এই দাবি তাঁর কাছেও রেখেছিলাম। তিনি বিষয়টি যথাসময়ে খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছিলেন। তবে এ ক্ষেত্রে বাসমালিকদের আবেদন হাই কোর্ট বা গ্রিন ট্রাইবুনাল শুনবে না। পরিবহণ দফতর যদি নিজের ইচ্ছায় বিষয়টি নিয়ে তাদের কাছে দরবার করেন, তা হলে অবশ্যই আমরা বাস চালানোর জন্য অতিরিক্ত সময় পেতেই পারি।’’
তবে পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, বেসরকারি বাসমালিকদের এমন দাবি মানা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, ২০০৯ সালের ৩১ জুলাই কলকাতা হাই কোর্ট এক নির্দেশে বলেছিল, কলকাতা মিউনিসিপ্যাল এলাকায় ১৫ বছরের মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়ি চালানো যাবে না। সঙ্গে গ্রিন ট্রাইবুনালের রায়েও প্রায় একই কথা বলা হয়েছে। যার ফলে চলতি অর্থবর্ষে পরিবহণ দফতরের ১১ হাজার গাড়ি বাতিল হতে চলেছে। বেসরকারি বাস সংগঠনের ওই দাবি মেনে নেওয়ার অর্থ কলকাতা হাই কোর্টের রায়কে উপেক্ষা বা অবমাননা করা। তা ছাড়া মেয়াদ উত্তীর্ণ বাসগুলিকে অতিরিক্ত সময় দেওয়ার কোনও নির্দিষ্ট আইন নেই পরিবহণ দফতরের কাছে। তাই ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে বাসের সময়সীমা বাড়ানো কোনও ভাবেই সম্ভব নয় বলেই জানাচ্ছে পরিবহণ দফতরের একটি সূত্র।