—প্রতীকী ছবি।
আট কোটিরও বেশি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে কলকাতা মহিলা কোঅপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড কর্তৃপক্ষের একাংশের বিরুদ্ধে। রাজ্য সমবায় দফতরের তরফে এ নিয়ে সোসাইটির দুই আধিকারিক ও সংস্থার অন্য কর্মকর্তাদের নামে উল্টোডাঙা থানায় ইতিমধ্যেই অভিযোগ (এফআইআর নম্বর: ৩১/ ৪ মার্চ ২০২৪) দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন হিসাবরক্ষক উজ্জ্বল ভট্টাচার্য, ম্যানেজার রাধা চক্রবর্তী এবং বিদায়ী বোর্ডের সম্পাদক উমা বসাক। সমবায় দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সোসাইটির সদস্য সংখ্যা কম-বেশি ছ’হাজার।
সমবায় দফতরের যুগ্ম রেজিস্ট্রার অব কোঅপারেটিভ সোসাইটি (সেন্ট্রাল জ়োন) বিজয় হালদারের দায়ের করা অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে, গত বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সদস্যদের থেকে নগদে মোট সংগৃহীত আমানতের পরিমাণ ছিল ৮,২৫,৯৩,৮৩০ টাকা। কিন্তু ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টে দেখা গিয়েছে, আমানতের পরিমাণ মাত্র ২,০৯,০৯৪ টাকা।
অভিযোগ, ফিক্সড ডিপোজ়িট সার্টিফিকেটের ‘ম্যাচিওরিটি’ বাবদ ৭৩ লক্ষেরও বেশি টাকা দেওয়া হয়েছে ২১ জনকে। তদন্তে দেখা গিয়েছে, ওই ফিক্সড ডিপোজ়িট সার্টিফিকেটগুলি ছিল ভুয়ো। বাস্তবে ওই ২১ জনের অস্তিত্বই নেই। পুনরায় সোসাইটির অডিট শুরু হয়েছে। সেই কাজ শেষ হলে এ ভাবে তছরুপ হওয়া অর্থের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে অনুমান সমবায় দফতরের।
অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে, ‘ফাইনাল পেমেন্ট’ দেওয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত থাকেন, সেই ম্যানেজার, হিসাবরক্ষক-সহ অন্যেরাই মূলত সোসাইটির এই বিপুল টাকা তহবিল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী। আমানতকারীদের টাকা ফেরানোর সময়ে তাঁদের পরিচয় সংক্রান্ত কোনও নথিই নেওয়া হয়নি। সব লেনদেন হয়েছে নগদে, কোভিড সংক্রমণকালে। পরিদর্শনকালে বিষয়টি জানাজানি হলে ম্যানেজার ও হিসাবরক্ষক বয়ান দিয়ে হিসাবে গরমিলের (জাগলারি) কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ওই সমবায়কে কম্পিউটরের মাধ্যমে হিসাবরক্ষার পরিকাঠামো তৈরি-সহ নানা কাজের জন্য সাড়ে ১৯ লক্ষ টাকা দিয়েছিল সমবায় দফতর। অভিযোগ, সেই কাজে ব্যবহার না করে, ওই টাকায় কর্মীদের বেতন দেওয়া হয়েছে। মেটানো হয়েছে ম্যানেজারের ব্যক্তিগত গাড়ির তেলের খরচ ও তাঁর গাড়িচালকের বেতন। রেজিস্ট্রার অব কোঅপারেটিভের অনুমতি না নিয়েই ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ঋণের (অনাদায়ী) সুদ মকুব করা হয়েছিল। অভিযোগপত্রে আরও লেখা হয়েছে, রুমা ঘোষ নামে সংস্থার বোর্ড অব ডিরেক্টর্স-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান (কার্যকালের মেয়াদ ২০১৭-২০২২) সমবায় দফতরের পরিদর্শকের কাছে লিখিত আকারে জানিয়েছিলেন, তাঁর সই নকল করেছেন হিসাবরক্ষক। এ ছাড়া, সোসাইটিতে কর্মী নিয়োগে ম্যানেজার স্বজনপোষণ করেছেন উল্লেখ রয়েছে অভিযোগপত্রে।
অভিযুক্তদের মধ্যে উমাদেবীর দাবি, ‘‘বোর্ডের সম্পাদক থাকাকালীন এ ধরনের কোনও অভিযোগ আমার কানে আসেনি। আমি সমবায়ে গিয়ে খোঁজ করব।’’ যদিও সূত্রের খবর, তছরুপের বিভাগীয় তদন্ত চলাকালীন তিনি ও চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের বয়ান নথিভুক্ত করা হয়। আর এক অভিযুক্ত উজ্জ্বলের বক্তব্য, ‘‘আমি নগদ লেনদেনের ৎ
সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। বেআইনি কাজ বা তছরুপ হয়ে থাকলে আমার সঙ্গে তার কোনও যোগ নেই। উপযুক্ত জায়গায় বলার সুযোগ পেলে সব জানাব।’’ রাধাদেবীকে ফোন করা হলে তিনি প্রথমে বলেছিলেন, ‘‘সমবায়ের অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিক্রিয়া দেব।’’ কয়েক দিন অপেক্ষার পরে ফোন করা হলে তিনি তা ধরেননি। মেসেজের উত্তরও দেননি। এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, ‘‘অভিযোগ জমা পড়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।’’