বিশ্বভারতীতে এসে ‘শ্যামলী’তে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রয়েছেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। ছবি বিশ্বভারতীর সৌজন্যে।
ছুটি পেলে সাত দিনের জন্য শান্তিনিকেতনে এসে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনে কাটাতে চান অমিত শাহ। রবিবার এক দিনের বোলপুর ও শান্তিনিকেতন সফরে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বিশ্বভারতীতে গিয়ে নিজের এই ইচ্ছের কথা জানান তিনি। রোড-শোয়ের আগে ঘণ্টা দুয়েক শান্তিনিকেতনে কাটান তিনি। বাউলের বাড়িতে সারেন মধ্যাহ্নভোজ।
সকাল ১০.৫০ মিনিটে শ্রীনিকেতনের হেলিপ্যাডে নামার কথা ছিল শাহের। ১১.৩৮ মিনিটে নামেন। অভ্যর্থনায় ছিলেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, দুই কোর্ট মেম্বার তথা বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত এবং লকেট চট্টোপাধ্যায়-সহ রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল সিংহ, জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডলেরা। হেলিপ্যাড থেকে কনভয় পৌঁছয় রবীন্দ্রভবনের সামনে। ‘উদয়ন’ গৃহে রবীন্দ্রনাথের বসার আসন ও শয্যায় পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে রবীন্দ্রভবন চত্বর ঘুরে দেখেন। তার পরে উপাসনা মন্দির হয়ে সঙ্গীতভবনের উদ্দেশে রওনা দেন। সেখানে তাঁকে নাচে-গানে স্বাগত জানান পড়ুয়ারা। পরের গন্তব্য বাংলাদেশ ভবন।
বাংলাদেশ ভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অমিত শাহ বলেন, “আজ অত্যন্ত সৌভাগ্যের দিন। বিশ্বভারতীতে এসে সেই মহামানবকে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পেলাম, যিনি গোটা বিশ্বে ভারতীয় জ্ঞান, দর্শন, কলা, সাহিত্যকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভাষা ও সাহিত্যের সঙ্গে ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্যের সামঞ্জস্য স্থাপনের কাজ করেছিলেন শান্তিনিকেতনে। প্রতিষ্ঠানের শতবর্ষে আবারও ভারতীয় ভাবধারাকে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে।” বিশ্বভারতীর এক আধিকারিক জানান, বাংলাদেশ ভবনে শাহ বলেছেন, তিনি ঈশ্বরের কাছে চাইবেন, যেন সাত দিন ছুটি পাওয়া যায়। তা হলে বিশ্বভারতীর মনোরম পরিবেশে এসে রবীন্দ্রসঙ্গীত উপভোগ করবেন।
আরও পড়ুন: বিশ্বভারতীতে শাহের সঙ্গী কেন বিজেপি নেতারা, প্রশ্ন
আরও পড়ুন: বাইরের লোক আনতে হয় না: অনুব্রত
সমগ্র যাত্রাপথ-সহ গোটা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছিল। সমস্ত অনুষ্ঠানেই সাধারণের প্রবেশ ছিল নিয়ন্ত্রিত। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ যৌথ নজরদারি চালিয়ে গিয়েছে। শাহের সফরের প্রতিবাদে বিক্ষোভের সম্ভাবনা থাকলেও তেমন দৃশ্য চোখে পড়েনি। বিশ্বভারতী সূত্রে খবর, এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে শাল ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয়েছে অমিত শাহের হাতে।
বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠান সেরেই শাহ মধ্যাহ্নভোজের জন্য চলে আসেন বাসুদেব দাস বাউলের বাড়িতে। শাঁখ বাজিয়ে, উলু দিয়ে শাহকে বরণ করে নেন পরিবারের সদস্যরা। উত্তরীয় পরিয়ে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যান বাসুদেব। বাড়িতে থাকা শিবমন্দিরেও পুজো দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বাসুদেবকে পাশে বসিয়েই মধ্যাহ্নভোজন সারেন শাহ। মাটির থালা, বাটি, গ্লাসে কলার পাতায় সরু চালের ভাত, বেগুন ভাজা, পটল ভাজা, পোস্তর বড়া, মুগের ডাল, আলুপোস্ত, পালং শাক, চাটনি দিয়ে দুপুরের খাওয়া সারেন শাহ-সহ উপস্থিত বিজেপি নেতারা। শেষ পাতে ছিল গোবিন্দভোগ চালের পায়েস ও নলেন গুড়ের রসগোল্লা। আয়োজনের প্রশংসাও করেন শাহ। উপহারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে একতারা দেন বাসুদেব।