Local News

মমতার বিরুদ্ধে বেনজির আক্রমণ অমিতের, সরকার ছুড়ে ফেলার ডাক

কলকাতা থেকে তারাপীঠ ঘুরে বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া যান বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। জনসভায় তিনি বলেন, ‘‘আমি তারাপীঠ থেকে মা তারার দর্শন করে এসেছি। মায়ের কাছে আমি প্রার্থনা করে এসেছি যাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই হিংসা ছড়াতে থাকা সরকারকে ছুড়ে ফেলার মতো শক্তি মা আমাদের কার্যকর্তাদের দেন।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৮ ২০:২৩
Share:

পুরুলিয়ার লাকদায় অমিত শাহ ও দিলীপ ঘোাষ। —নিজস্ব চিত্র

সকাল থেকেই রাজ্য বিজেপি নেতারা বলছিলেন, ‘‘পুরুলিয়ার দিকে চোখ রাখুন।’’ রাজ্যস্তরের নেতা হন বাজেলাস্তরের, সবার মুখে একই কথা— ‘‘অমিতজি আজ কী বলেন, দেখে নিন। তার পরে কথা হবে।’’

Advertisement

বিকেলে শিমুলিয়া ময়দানের মঞ্চ থেকে অমিত শাহ ভাষণটা শুরু করতেই স্পষ্ট হয়ে গেল, এ সভার মেজাজ অন্য রকম।

ভারত মাতা কি জয়—স্লোগানে ভাষণ শুরু বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির। একবার স্লোগানটা দিয়েই সমবেত জনতার উদ্দেশে হুঙ্কারের ভঙ্গিতে অমিত শাহের মন্তব্য, ‘‘এত জোরে বলুন, যাতে কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বধির সরকারের কানেও আওয়াজ পৌঁছয়।’’

Advertisement

অমিত শাহ আগেও সভা করেছেন বাংলায়। নরেন্দ্র মোদীও করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণও করেছেন। বাংলায় এসে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের তরফ থেকে এই প্রথম নয়। কিন্তু বাংলা থেকে হোক বা বাংলার বাইরে থেকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সরকার সম্পর্কে এতটা তীব্র স্বর আগে কখনও অমিত শাহ বা নরেন্দ্র মোদীর গলায় শোনা গিয়েছে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘ঢাক-ঢোলে লাভ নাই, উন্নয়ন অমিত শাহের রাস্তাতেও দাঁড়িয়ে ছিল’

কলকাতা থেকে তারাপীঠ ঘুরে বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া যান বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। জনসভায় তিনি বলেন, ‘‘আমি তারাপীঠ থেকে মা তারার দর্শন করে এসেছি। মায়ের কাছে আমি প্রার্থনা করে এসেছি যাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই হিংসা ছড়াতে থাকা সরকারকে ছুড়ে ফেলার মতো শক্তি মা আমাদের কার্যকর্তাদের দেন।’’ পঞ্চায়েতে ব্যাপক নির্বাচনী সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে অমিত শাহ তীব্র আক্রমণ করেন মমতা এবং তৃণমূলকে। তার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে শাহ বলেন, ‘‘আপনার সরকার আর বেশি দিন টিকবে না।’’

পুরুলিয়ার মঞ্চ থেকে এ দিন রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্রের নাম শোনা গিয়েছে অমিত শাহের মুখে। ‘‘যে বাংলা আগে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরে মজে থাকত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৌলতে এখন সেই বাংলায় শুধুই বোমার শব্দ।’’ পঞ্চায়েতে ২ কোটি মানুষ ভোট দিতে পারেননি বলে অমিত শাহ এ দিন দাবি করেন।লোকসভা নির্বাচনে ভোটটা পঞ্চায়েতের মতো হবে না এবং বিজেপি ২২টির বেশি আসন নিয়ে এ রাজ্যের সবচেয়ে বড় দল হয়ে উঠবে বলে অমিত শাহ এ দিন নিজের দলের কর্মীদের ভরসা জোগান।

তারাপীঠ মন্দিরে যাওয়ার রাস্তার দু’ধারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সম্বলিত হিন্দিতে লেখা ফ্লেক্সের প্রসঙ্গও এ দিন উঠে এসেছে বিজেপি সভাপতির ভাষণে। ‘‘আমি যাতে বুঝতে পারি, তাই হিন্দিতে লেখা হয়েছে। না লিখলেও অসুবিধা ছিল না। আমি আমার সঙ্গীদের দিয়ে পড়িয়ে নিতাম।’’ কটাক্ষের সুরে এ দিন বলেন অমিত শাহ।মমতার ছবি সম্বলিত ফ্লেক্সে রাজ্যের উন্নয়ন সম্পর্কে যা লেখা হয়েছে, সে প্রসঙ্গ টেনে এর পর অমিত প্রশ্ন করেন, ‘‘পুরুলিয়া জেলায় কেন এখনও বাড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে হেঁটে যেতে হয় পানীয় জল আনার জন্য?মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার জবাব দিক।’’

আরও পড়ুন: শাহ-পথে পোস্টার ‘চুরি’র অভিযোগ

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে এ দিন প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং জনসাধারণের উন্নয়ন নিয়ে দলবাজি করার অভিযোগও এনেছেন অমিত শাহ। বামেরা ২ লক্ষ কোটি টাকার দেনা বাংলার মাথার উপরে চাপিয়েছিল, তৃণমূলের জমানায় তা বেড়ে হয়েছে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি— মন্তব্য বিজেপি সভাপতির। নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা বাড়ছে দেখে কেন্দ্রের বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা রাজ্যবাসীর কাছে মমতার সরকার পৌঁছতে দিচ্ছে না বলেও তিনি দাবি করেন।

রাজ্যকে টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র, ঋণের সুদ বাবদ বিপুল অঙ্কের অর্থ প্রতি মাসে কেটে নিচ্ছে— এই অভিযোগ বহুবার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে অভিযোগ খণ্ডন করে অমিত শাহ এ দিন দাবি করেন, ইউপিএ জমানায় বাংলাকে ১ লক্ষ ৩২ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল, নরেন্দ্র মোদীর সরকার বাংলাকে ৩ লক্ষ ৫৯ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে, কিন্তু তার সুফল বাংলার সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছয়নি। ‘‘তৃণমূলের সিন্ডিকেটই খেয়ে নিয়েছে কেন্দ্রের পাঠানো সব টাকা’’, মন্তব্য নরেন্দ্র মোদীর প্রধান সেনাপতির।

বর্তমান সরকারের আমলে বাংলায় শিল্প বাড়েনি, বেড়েছে জমি মাফিয়া, কয়লা মাফিয়া, গরু পাচারকারী— দাবি বিজেপি সভাপতির। বাংলাদেশ থেকে এ রাজ্যে ক্রমাগত অনুপ্রবেশ চলছে, ড্রাগও আসছে, দাবি তাঁর। ‘‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের যদি রুখতে চান, তা হলে তৃণমূলের সরকাকে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলুন আর বিজেপির সরকার আনুন।’’ আহ্বান অমিত শাহের।

জাতীয় স্তরে বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়াসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত সক্রিয়। মমতার এই ভূমিকা যে বিজেপি-কে খুব স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না, তা অমিত শাহের ভাষণে স্পষ্ট। জোটের প্রয়াসকে কটাক্ষ করে অমিত শাহের মন্তব্য, ‘‘মহাজোট তৈরি করুন, আমাদের কোনও আপত্তি নেই...কিন্তু তার আগে বাংলা সামলান। বাংলায় আপনার পায়ের তলা থেকে মাটি সরতে শুরু করে দিয়েছে।’’

তৃণমূল অবশ্য বিজেপি সভাপতির এই হুঙ্কারকে নস্যাৎ করছে। অমিত শাহের মন্তব্যের জবাবে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে বলেন, ‘‘বিড়ালকে হাওয়া দিয়ে কি আর বাঘ বানানো যায়?’’ অমিত শাহের ছোড়া চ্যালঞ্জকে গুরুত্ব না দেওয়ার ভঙ্গিতে পার্থবাবু বলেন, ‘‘ফাঁকা কলসির আওয়াজ বেশি হয়।...তৃণমূল থেকে যাওয়া একটা পাগলা দাশু ওঁদের ভুল বোঝাচ্ছে। আর ভুল বুঝে তাঁরা নাচানাচি করছেন। সব নাচানাচি বন্ধ হয়ে যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement