বাঁকুড়ার রবীন্দ্র ভবন পরিদর্শনে বিজেপি নেতৃত্ব। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন, মধ্যাহ্নভোজ সারবেন আদিবাসী বাড়িতে। কাল, বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ায় দলীয় বৈঠকের ফাঁকে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ ভাবেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ গড়বেন বলে বিজেপি সূত্রে খবর।
ইতিমধ্যেই বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনে তাঁর বৈঠকের জন্য প্রশাসনিক ছাড়পত্র মিলেছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতার বৈঠকের প্রস্তুতিতে রবিবার থেকেই লাগাতার বাঁকুড়ায় এসে দফায়-দফায় বৈঠক করে যাচ্ছেন বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। মঙ্গলবার বাঁকুড়ায় দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন সাংসদ তথা বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়, বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে জেলা পুলিশের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও। তিনি বলেন, ‘‘রবীন্দ্রভবনের নিরাপত্তাজনিত বিষয় পুলিশের তরফে খতিয়ে দেখা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কর্মসূচি যেখানে যেখানে রয়েছে, সর্বত্রই পুলিশের নজর রয়েছে।’’
বিজেপির রাজ্য নেতা তথা বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকার এ দিন বলেন, “জেলার আদিবাসী, কামার, কুমোর-সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের দু’শো মানুষকে অমিতজির বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন অমিতজি। এ ছাড়া, বাঁকুড়া ১ ব্লকের আন্ধারথোল গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি আদিবাসী পরিবারে তাঁর মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।”
এ দিন বৈঠকের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে রবীন্দ্রভবন ঘুরে দেখেন বিজেপির রাজ্য নেতা রাজুবাবু, সুভাষবাবুরা। বিজেপি সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার হেলিকপ্টারে জেলায় ঢোকার কথা শাহের। তার পরে তাঁর আন্ধারথোল পঞ্চায়েত এলাকার আদিবাসী পরিবারে মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেওয়ার কথা। সেখান থেকে রবীন্দ্রভবনে বৈঠক করতে যাবেন।
নেতৃত্বের খবর, রবীন্দ্রভবনে শাহের তিন দফা বৈঠকের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রথমে তিনি দলের রাঢ়বঙ্গ ও মেদিনীপুর জ়োনের নেতৃত্বের সঙ্গে দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। তার পরে রাজ্যের বিজেপি সাংসদ ও বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি। শেষে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে আলাপচারিতা করার কথা শাহের। বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র বলেন, “বিধানসভা ভোটের মুখে জেলায় অমিতজির আসা ও বৈঠক করার গুরুত্ব আমাদের কাছে অপরিসীম। সর্বতোভাবে এই বৈঠকটিকে সফল করতে আমরা বদ্ধপরিকর।”
এ দিকে শাহের জেলা সফরকে কেন্দ্র করে বিজেপি কর্মীদের আগ্রহ তুঙ্গে উঠেছে। বাঁকুড়া শহরের রাজগ্রাম, লোকপুর, গোবিন্দনগর, রানিগঞ্জ মোড়, স্টেশনমোড়ের মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তোরণ তৈরি করছে বিজেপি। তা ছাড়া, শহরের ভিতরে বিজেপির পতাকা ও ব্যানার টাঙানো হচ্ছে।
দলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি তথা বাঁকুড়া শহরের বিদায়ী কাউন্সিলর নীলাদ্রিশেখর দানা বলেন, “অমিতজির সফরকে কেন্দ্র করে বাঁকুড়া শহরকে বিজেপির ‘দুর্গ’ হিসেবে সাজিয়ে তুলছি আমরা। সারা শহরের প্রতিটি কোণায় বিজেপির দলীয় পতাকা ও ফ্লেক্স টাঙানো হচ্ছে।”
বিজেপি শিবিরের এই ‘সাজো সাজো’ রব সম্পর্কে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরার মন্তব্য, “বিজেপির নেতা-কর্মীদের বছরের অন্য সময় সাধারণ মানুষের খোঁজখবর নিতে দেখা যায় না। তাই ওদের কর্মসূচি নিয়ে সাধারণ মানুষের কোনও আগ্রহ নেই। আমরাও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি না।” বিজেপি সাংসদ সুভাষবাবুর পাল্টা মন্তব্য, ‘‘সাধারণ মানুষ কাদের চান, কোন দলের নেতা-কর্মীদের পাশে পান, তা বিধানসভার ভোটের ফলাফলেই প্রমাণ হয়ে যাবে।’’