রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে প্রথমবার অমিত শাহ। নিজস্ব চিত্র।
তিনি এলেন, শুনলেন। কিন্তু মুরলীধর সেন লেনে বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে কোনও কথাই বললেন না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বরং উল্টে খুঁটিয়ে জেনে নিলেন বাংলার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি। শনিবার সকালে নবান্নে পূর্বাঞ্চল পরিষদ (ইস্টার্ন জ়োনাল কাউন্সিল)-এর বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের ঠিক আগের রাতে বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বসে কি ‘সেটিং’ তত্ত্ব খারিজ করার চেষ্টা করলেন শাহ? জল্পনা তৈরি হয়েছে।
শুক্রবার রাত পৌনে ৯টা নাগাদ শাহের বিমান কলকাতায় নামে। এর পর গাড়িতে চালকের পাশের আসনে শাহ, পিছনের আসনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে তাঁর কনভয় ছোটে মধ্য কলকাতার মুরলীধর সেন লেনে দলের রাজ্য দফতরের দিকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে ধরনের নিরাপত্তা বলয় পেয়ে থাকেন, তাতে সংকীর্ণ গলির ভিতর বিজেপির রাজ্য দফতরে কেন এলেন শাহ, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। বঙ্গ বিজেপির দুই নেতা দিলীপ ঘোষ এবং শুভেন্দু অধিকারীর সংঘাতের প্রেক্ষাপটে শাহ সরকারি সফরে কলকাতা এসে যে ভাবে দলীয় বৈঠকে হাজির থাকলেন, তাতে জল্পনা তৈরি হয়েছিল, পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলীয় অন্তর্কোন্দল মেটাতে কড়া দাওয়াই দিতে পারেন তিনি। শুক্রবারের বৈঠকে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দিলীপ, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু ছাড়াও হাজির ছিলেন বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন নেতা সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালবীয়, রাজ্য বিজেপির পাঁচ সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পাল, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো এবং দীপক বর্মণেরা।
শাহ শুনলেন বেশি, বললেন কম। নিজস্ব চিত্র।
এই প্রথম বিজেপির রাজ্য দফতরে গেলেন শাহ। জল্পনা ছিল, দিলীপ-শুভেন্দু সংঘাত-সহ অন্যান্য কোন্দল নিয়ে বার্তা দেবেন। কিন্তু সূত্রের খবর, বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ আদৌ ওঠেনি। বরং শাহ বেশি উৎসাহিত ছিলেন রাজ্যে দলের অবস্থা কেমন তা জানতে। বৈঠকে হাজির এক নেতার কথায়, ‘‘গোটা বৈঠকে শাহ নিজে খুব বেশি কথা বলেননি, তবে প্রত্যেক নেতার কাছ থেকে তাঁদের বক্তব্য শুনেছেন মন দিয়ে।’’ নিজের দলের পাশাপাশি তৃণমূল তো বটেই কংগ্রেসেরও বুথস্তরের সংগঠনের হাল হকিকত জানতে চেয়েছেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই বৈঠকে শাহ বিশেষ উৎসাহ নিয়ে বামেদের অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করেন। সূত্রের খবর, শাহ খুঁটিয়ে জানতে চান, বর্তমান বাংলায় বামেদের অবস্থা কেমন? পঞ্চায়েতে ভোট কাটাকাটির সম্ভাবনা কতটা, সেই প্রশ্নও করেন শাহ।
যদিও সকলের নজর ছিল, দিলীপ-শুভেন্দু অন্তর্দ্বন্দ্ব মেটাতে শাহ কী বার্তা দেন তার দিকে। কিন্তু দলের কোন্দলে নাকই গলালেন না শাহ। শনিবার সকালে পূর্বাঞ্চল পরিষদের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে বৈঠক শাহের। ইতিমধ্যেই বাম ও কংগ্রেস ‘সেটিং তত্ত্ব’ নিয়ে গলা চড়াতে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিজেপির অন্দরেও। এই প্রেক্ষিতে নবান্নের বৈঠকের ঠিক আগের রাতে বিজেপির রাজ্য দফতরে বসে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে শাহ কি আসলে সেই ‘সেটিং’ তত্ত্বকেই নস্যাৎ করতে চাইলেন? এমনটাই মনে করছে গেরুয়া শিবিরের একাংশ।