ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকে না থেকে শুধু তাঁর সঙ্গে দেখা করে ক্ষতিপূরণের হিসেব তুলে দিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুপুরে সেই ‘স্বল্প সাক্ষাৎ’-এ মমতার সঙ্গে ছিলেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদী ফিরে যান। তারপর সন্ধ্যা থেকেই মমতার বৈঠকে না থাকা নিয়ে টুইট করতে থাকেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীরা। টুইট করে অসন্তোষ প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও। স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মমতার ‘ঔদ্ধত্য’ নিয়ে টুইট করেন সন্ধ্যা ৭টা ৫৪ মিনিটে। ঘটনাচক্রে এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় সরকার।
বৃহস্পতিবারই কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল ইয়াস পরিস্থিতি দেখতে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসবেন প্রধানমন্ত্রী। একই দিনে মমতাও যাবেন উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি দেখতে। বোঝা যাচ্ছিল এর মধ্যেই মোদী-মমতার সাক্ষাৎ হবে। সকাল থেকেই সফর করছিলেন মমতা। এই সফরে আগাগোড়াই মমতার সঙ্গী ছিলেন আলাপন। তিনি একাধিক বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও নেন। প্রথমেই হিঙ্গলগঞ্জে যান মমতা। সেখান থেকেই জানান, মোদীর সঙ্গে বৈঠক করা হয়ত হবে না। এরপর কলাইকুণ্ডায় মোদী বৈঠকে বসলেও তাতে অংশ না নিয়ে শুধু রিপোর্ট জমা দেন মমতা। জাতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ মমতা মোদীকে জানান, ‘‘আপনি ডেকেছেন বলে আমি দেখা করতে এলাম। আমি আর আমার মুখ্যসচিব আপনার কাছে ক্ষতক্ষতির রিপোর্ট জমা দিতে চাই। দিঘায় আমাদের একটি বৈঠক আছে, আমাদের যাওয়ার অনুমতি দিন।’’ ৩ টে ৪৭ মিনিটে বেরিয়ে যান তিনি।
মমতার বৈঠক এড়িয়ে যাওয়া নিয়ে তারপর থেকেই সুর চড়াতে শুরু করে বিজেপি। টুইট করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আগে পরে একের পর এক টুইট আসতে থাকে। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ লেখেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে যা ঘটল, তা দুর্ভাগ্যজনক। প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী একক কোনও ব্যক্তি নন বরং প্রতিষ্ঠান। দু’জনেই জনসেবার জন্য দায়বদ্ধ ও সংবিধান মেনে শপথ নিয়েছেন’। বিজেপি-র সভাপতি জেপি নড্ডা লেখেন, ‘যখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজি ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এ ক্ষতিগ্রস্ত বাংলার মানুষের পাশে দঢ়তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন, তখন মমতাজির উচিত ছিল জনগণের কল্যাণার্থে নিজের অহংকে বিসর্জন দেওয়া। পিএম-এর বৈঠকে তাঁর অনুপস্থিতি হল সাংবিধানিক নীতি ও সমবায় মৈত্রীতন্ত্রের হত্যা’। টুইট করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও। তিনি লেখেন, ‘ঘুর্ণিঝড় ইয়াস-এর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর অধিকারিকরা অংশ নেননি। এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে বয়কট করার সমান’।
এর পর ৭টা ৫৪ মিনিটে টুইট করেন অমিত শাহ। তিনি লেখেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর আজকের আচরণ দুর্ভাগ্যজনক ভাবে অশোভন। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বহু সাধারণ মানুষের উপর প্রভাব ফেলেছে। এখন ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর সময়। দিদি তাঁর ঔদ্ধত্যকে জনস্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন। আজকের আচরণ তারই প্রমাণ’।