বিয়ের আসরে পিন্টু ও এঞ্জেল। নিজস্ব চিত্র
পরিচয়-প্রণয়-পরিণয়। সাত বছরের সম্পর্ক এগোচ্ছিল পরিণতির দিকে। হঠাৎই উদয় করোনা-কাঁটার!
সেই ‘কাঁটা’ তুলেই শেষমেশ সাত পাকে বাঁধা পড়লেন কাঁথির যুবক পিন্টু জানা আর চিনা কন্যা এঞ্জেল পিং। করোনাভাইরাসের হাজারও নিয়ম-নিষেধের বেড়াজালে এঞ্জেলের পরিবার চিনে আটকে গেলেও আটকাল না চারহাত এক হওয়া। গত মঙ্গলবার পিন্টুর বাড়িতেই হল বিয়ে। এঞ্জেল সাজলেন লাল শাড়ি, চেলি, গয়নায়। আর চিন থেকে নবদম্পতিকে মোবাইলের ভিডিয়ো কলে আশীর্বাদ করলেন এঞ্জেলের পরিজনেরা।
কাঁথি-১ ব্লকের পশ্চিম পারুলিয়ার বাসিন্দা পিন্টু সাত বছর আগে কর্মসূত্রে চিনে গিয়েছিলেন। চিনের গোয়াং প্রদেশে জামাকাপড়ের ব্যবসা করেন পিন্টুর মামা। সেখানেই কাজ করতে গিয়েছিলেন পিন্টু ও তাঁর ভগ্নিপতি। গোয়াং প্রদেশের বাসিন্দা এঞ্জেলদেরও পোশাকের ব্যবসা। সেই সূত্রে দু’জনের দেখা-সাক্ষাৎ ও ভাষার বাধা পেরিয়েই প্রেম। তাঁরা ঘর বাঁধার সিদ্ধান্ত নেন। তাতে বাধ সাধেনি কারও পরিবারই।
মাসখানেক আগে পিন্টু এবং এঞ্জেলের বিয়ের দিনক্ষণ স্থির হয়। ঠিক হয়, বিয়ে হবে কাঁথিতে, হিন্দু মতে। সেই মতো কিছু দিন আগে পিন্টু ও এঞ্জেল কাঁথিতে চলে আসেন। তার পরেই করোনার কবলে পড়ে চিন। সংক্রমণ যাতে না ছড়ায়, সে জন্য চিনের আন্তর্জাতিক উড়ান, ট্রেন, বাস পরিষেবায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। আর তাতেই এঞ্জেলের পরিবারের কাঁথিতে আসার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
আরও পড়ুন: ‘শিনজিয়াং শহরটা যেন ঘরেই বন্দি, ফিরে এলাম’
তাতে অবশ্য বিয়ে আটকায়নি। মঙ্গলবার পিন্টু এবং এঞ্জেল সাত পাকে বাঁধা পড়েছেন। বুধবার ছিল বৌভাত। এঞ্জেল জানান, তাঁর পরিবারের সাত জনের আসার কথা ছিল। বিমান বাতিল হওয়ায় আসতে পারেননি। পিন্টু বলেন, ‘‘শ্বশুরবাড়ি লোকেদের আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা ছিল। তা হল না।’’ বাংলা বোঝেন না এঞ্জেল। বিদেশের শ্বশুরবাড়িতে এসে অবশ্য তাঁর মুখের হাসি মোছেনি। চিনা পুত্রবধূ পেয়ে খুশি পিন্টুর মা সবিতা জানাও। তবে একটা ভয় রয়েছে। সবিতা বলছেন, ‘‘ভিন্ ধর্ম, বিদেশি মেয়ে এ সবে আমাদের কোনও আপত্তি ছিল না। তবে ওই ভাইরাস নিয়ে কিছুটা চিন্তা তো আছেই। শুধু চাই ছেলে-বৌমা ভাল থাকুক।’’