ফ্রান্সের নিসে চলছে মাঙ্কিপক্সের টিকাকরণ। বৃহস্পতিবার। ছবি: রয়টার্স।
সমকামী পুরুষদের জন্য সতর্কতা জারি করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। ঝড়ের গতিতে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। তাতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে সমকামী পুরুষদের। হু-র বক্তব্য, আক্রান্তদের বেশির ভাগই সমকামী পুরুষ। দেখা যাচ্ছে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের পরপরই তাঁরা সংক্রমিত হয়েছেন। এ অবস্থায়, যৌন সঙ্গী বারবার বদল করলে বিপদ বেশি। একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত না হতেই সমকামী পুরুষদের পরামর্শ দিচ্ছে হু।গত সপ্তাহেও একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইউরোপে মাঙ্কিপক্স সংক্রমিতের ৯৯ শতাংশ ঘটেছে যৌন সম্পর্কের পরে। এর মধ্যে ৯৮ শতাংশ সমকামী পুরুষ। হু-র প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস শনিবার এই রোগ সম্পর্কে বিশ্ব জুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসার আশঙ্কা যতটা সম্ভব কমাতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘যে সব পুরুষের যৌনসঙ্গী পুরুষ, তাঁদের বলছি, সীমিত সংখ্যক পুরুষের সংস্পর্শে আসুন। আপাতত নতুন কারও সঙ্গে যৌন সম্পর্কে যাবেন না। যদি নতুন কারও সঙ্গে সম্প্রতি সম্পর্কে গিয়ে থাকেন বা ভবিষ্যতে যান, যোগাযোগ রাখুন। খোঁজ রাখুন, তিনি সুস্থ আছেন কি না।’’ গত মে মাস থেকে মাঙ্কিপক্স ছড়াতে শুরু করে। প্রথম সংক্রমণ চিহ্নিত হয় পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার দেশে। সেখানে রোগটি মহামারির আকার ধারণ করে। কিন্তু আফ্রিকার সঙ্গে বাকি বিশ্বের রোগের চরিত্রের তফাত রয়েছে। এ দিন টেড্রস জানান, ৭৮টি দেশে এখনও পর্যন্ত ১৮ হাজারের বেশি সংক্রমণ নথিভুক্ত হয়েছে। আফ্রিকা বাদে বাকি সংক্রমণের ৭০ শতাংশ ঘটেছে ইউরোপে। ২৫ শতাংশ দুই আমেরিকায়। প্রাণহানি কম। মে থেকে এ পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১০ শতাংশকে শেষমেশ হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।গত সপ্তাহে যে গবেষণাপত্রটি দাবি করেছে, ৯৮ শতাংশ সংক্রমণ ঘটেছে পুরুষ-পুরুষে যৌন সম্পর্কে, সেটি ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এ প্রকাশিত হয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে, ৯৮ শতাংশ সংক্রমিত হয় সমকামী, নয়তো উভকামী। যদিও মাঙ্কিপক্সকে এখনও যৌন সম্পর্ক থেকে ছড়ানো অসুখ বা ‘সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। কিন্তু দেখা গিয়েছে ঘনিষ্ঠ শারীরিক সম্পর্কের পরেই এই সংক্রমণ ঘটেছে। সংক্রমণটিকে এই পর্যায়ে রুখে দিতে চাইছেন বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, এতেও গোষ্ঠী সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। গায়ে-গায়ে ছোঁয়া লাগা থেকে শ্বাসপ্রশ্বাস, সংক্রমিতের জামাকাপড়, বিছানা, টাওয়েল থেকে রোগ ছড়াতে পারে। টেড্রস বলেন, ‘‘সমকামী পুরুষদের মধ্যে বেশি সংক্রমণ ধরা পড়লেও এটি সংক্রমিতের সংস্পর্শে এলেই ছড়াতে পারে। শিশু, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, বয়স্কদের বিপদ এড়াতে এখনই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’এই মুহূর্তে বিষয়টির সঙ্গে যেহেতু সমকাম জড়িয়ে রয়েছে, ফলে এ নিয়ে একটা অস্বস্তিও তৈরি হচ্ছে। কারণ এখনও সমকামী সম্পর্ককে সহজ ভাবে দেখা হয় না সমাজে। বহু পুরুষ, বিশেষ করে উভকামীরা গোপন রাখেন তাঁদের যৌন চাহিদা। এঁদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। সমাজের ভয়ে তাঁরা রোগ লুকোচ্ছেন। ফলে অজান্তেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। টেড্রসের আর্জি, সংক্রমণ ঘটলে লুকাবেন না। তিনি বলেন, ‘‘গোটা বিশ্বের কাছেও আমার আবেদন, রোগীদের সঙ্গে কোনও প্রকার বৈষম্যমূলক আচরণ করবেন না। সেটা যদি করেন, আপনারও বিপদ বাড়বে।’’