ছবি: সংগৃহীত।
নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দ্বারা অপমানিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলে আগেই সরব হয়েছেন মমতা। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে অমর্ত্যবাবুকে বিজেপির ‘আক্রমণের নিশানা’ বলে চিহ্নিত করে দিলেন। সোমবার বোলপুরে তাঁর বক্তব্য, “ওরা (বিজেপি) রাজনৈতিক আক্রমণের লক্ষ্য করে তুলেছে আমাকে। অমর্ত্যবাবুকে শিক্ষাক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলে আক্রমণ করা হচ্ছে। উনি বাংলার গর্ব।”
রাজ্যে নির্বাচনের মুখে নোবেলজয়ী বাঙালি অমর্ত্যবাবুকে নিয়ে বিশ্বভারতী যে জটিলতা তৈরি করেছে, মমতার এ দিনের বক্তব্য তাকে সরাসরি রাজনৈতিক মোকাবিলার জায়গায় নিয়ে এল বলে পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন।
কয়েক দিন আগে ‘অমর্ত্যদা’ বলে সম্বোধন করে নোবেলজয়ীকে একটি চিঠি লিখেছিলেন মমতা। ঘটনাচক্রে, এ দিনই অমর্ত্যবাবুর চিঠির উত্তর এসে পৌঁছয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। বিশ্বভারতীর জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের ‘জট’কে কেন্দ্র করে একটি মহল থেকে দাবি করা হয়েছিল, অমর্ত্যবাবুর বাড়ির জমির কিছুটা অংশ বিশ্বভারতীর এক্তিয়ারভুক্ত। এমন অভিযোগের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বাংলার তরফে ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষমা চেয়ে মমতা বলেছিলেন, “অমর্ত্য সেন নিজে আদর্শগত ভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে বলে তাঁর বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তাই বলে যাবে, এটা বাংলার মানুষ সহ্য করবে না।” নোবেলজয়ীকে ‘অমর্ত্যদা’ বলে সম্বোধন করে চিঠি লিখে মমতা জানিয়েছিলেন ‘অনুগ্রহ করে এ দেশের আধিপত্যবাদ এবং অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাকে আপনার বোন এবং বন্ধু হিসাবে গণ্য করুন’। ‘যদি আপনি আমাকে এই নামে সম্বোধন করতে সম্মতি দেন’ — এ কথা চিঠিতে লিখে এ দিনই ব্যক্তিগত জায়গা থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ডিয়ার মমতা’ বলে সম্বোধন করেছেন অমর্ত্যবাবু। সেখানে লিখেছেন, ‘চিঠিতে আপনার সমর্থনের কথা জেনে খুব খুশি হয়েছি। যে ভাবে ব্যস্ত সময়ের মধ্যে আক্রান্ত মানুষের জন্য সময় বের করেছেন, তা যে আমাকে শুধু আশ্বস্ত করেছে তাই নয়, এটা আমাকে স্পর্শ করে গিয়েছে। আপনার বলিষ্ঠ বক্তব্য এবং যা ঘটছে, সে সম্পর্কে আপনার উপলব্ধি আমার কাছে প্রবল শক্তির উৎসের মতো।’ তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী চিঠি পাঠানোয় মমতাকে ধন্যবাদও দিয়েছেন অমর্ত্যবাবু।
আরও পড়ুন: কিসান রেলের ‘ছদ্মনামে’ বঙ্গে ‘ভোট এক্সপ্রেস’-এর উদ্বোধন মোদীর
আরও পড়ুন: ‘লভ’-এর মধ্যে ‘জিহাদ’ থাকতে পারে না, ধর্মান্তরণ আইন নিয়ে একহাত নিলেন অমর্ত্য সেন
গত বেশ কয়েক দশক ধরে শান্তিনিকেতনে বাস করছেন অমর্ত্যবাবুর পরিবার। সে বাড়ি এখন অমর্ত্য সেনের নামে চিহ্নিত। এত দিন বাদে জমির হিসেব নিয়ে বিশ্বভারতী যা করছে, তাকে শিষ্টাচারের পরিপন্থী বলে ব্যাখ্যা করে পরে ঘনিষ্ঠমহলে মমতা আরও বলেন, “আমার যদি সেই সুযোগ আসে, তা হলে আমি অমর্ত্যবাবুকে জমি দিতে পারলে ধন্য হব। তিনি যা বলবেন, যে ভাবে বলবেন, রাজ্য সরকার পাশে থাকবে।”
পাঁচ কথা
‘‘অমর্ত্য সেনকে নিয়ে বিজেপির অস্বস্তি পুরনো। মমতার সঙ্গেও তাদের রাজনৈতিক শত্রুতা।’’
রজতকান্ত রায়, ইতিহাসবিদ, প্রাক্তন উপাচার্য, বিশ্বভারতী
‘‘নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সময় থেকেই অমর্ত্য সেন বিজেপির চক্ষুশূল। এখন পশ্চিমবঙ্গই বিজেপির লক্ষ্য। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাদের নিশানায় থাকবেনই।’’ সৌরীন ভট্টাচার্য, অর্থনীতিবিদ
‘‘অমর্ত্যবাবুর প্রতি বিজেপির প্রতিহিংসার মনোভাব, ২০১৪ থেকেই দেখছি। আর বাংলা দখলের লক্ষ্যে মমতার প্রতি আক্রোশও বাড়ছে।’’
সুগত বসু, ইতিহাসবিদ
‘‘অমর্ত্য সেনের বাড়ি নিয়ে যা চলছে, নিন্দনীয়। কেন্দ্রের ইন্ধনে এটা চলছে। অমর্ত্যবাবুর অপমান সব বাঙালির অপমান। মমতাও বরাবর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী। কেন্দ্র তাঁকেও নিশানা করছে।’’
জয় গোস্বামী, কবি
‘‘বিশ্বভারতী ও অমর্ত্য সেনের বিষয়টা অরাজনৈতিক। এই বিবাদে জোর করে বিজেপি-কে ঢোকানো হচ্ছে।’’
স্বপন দাশগুপ্ত, রাজ্যসভার সাংসদ, বিজেপি
রবীন্দ্রনাথ এবং বাঙালির গর্বকে এ দিন ফের তুলে ধরে মমতা বলেন, “অমর্ত্য সেন বাংলার গর্ব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পদক চুরি হয়ে গিয়েছে। সিবিআই তদন্ত করেছে। অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে মাদার টেরিজা— সারা পৃথিবীর মানুষ তাঁদের চেনেন। তাঁরা কী আদর্শ নিয়ে কথা বলবেন, সেটা তাঁদের নিজস্ব ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু শুধু মাত্র তাঁকেই (অমর্ত্যবাবু) নয়, আরও অনেকেই টার্গেট করা হচ্ছে। রবীন্দ্র সংস্কৃতিকেও ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। মূর্তি ভেঙে বিদ্যাসাগরকে ভুলিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা হচ্ছে। নেতাজির সমস্ত ফাইল দেখানোর কথা ছিল (কেন্দ্রের), কিন্তু আজ পর্যন্ত কিছু হয়নি।”