স্কুলের দৈনন্দিন খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা স্কুল কর্তৃপক্ষের। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বছর শেষ হতে চলল। অভিযোগ, এখনও রাজ্যের প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের প্রায় কোনও স্কুলেই আসেনি কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা। ফলে স্কুলের দৈনন্দিন খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা স্কুল কর্তৃপক্ষের। প্রধান শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, কম্পোজ়িট গ্রান্ট না মেলায় অনেক স্কুলের দৈনন্দিন পরিষেবা যেমন বিদ্যুৎ-টেলিফোন বিল, চক, ডাস্টার কেনার খরচ পর্যন্ত কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না।
কম্পোজ়িট গ্রান্ট বাবদ স্কুলগুলির দৈনন্দিন খরচ চালানোর জন্য কেন্দ্র দেয় ৪০ শতাংশ এবং রাজ্য দেয় ৬০ শতাংশ। পড়ুয়ার সংখ্যার ভিত্তিতে স্কুলকে এই টাকা দেওয়া হয়। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০০০-এর বেশি, তাদের বছরে এক লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা। যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০০০-এর কম, কিন্তু ২৫০-এর বেশি, সেখানে ৭৫ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। যে স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০০ থেকে ২৫০-এর মধ্যে, সেখানে ৫০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। যে স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০০-র আশেপাশে, সেই স্কুলের ২৫ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। তবে বেশির ভাগ স্কুলই এই নির্ধারিত টাকা পায় না বলে অভিযোগ। প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘এক হাজারের বেশি পড়ুয়ার স্কুলগুলো এক লক্ষ তো দূরের কথা, ৫০ হাজারও নিয়মিত পাচ্ছে না। অনেক স্কুলে চক, ডাস্টার, বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের চার্ট, গ্লোব, কেনার পয়সাও নেই। স্কুলের দৈনন্দিন খরচ চলবে কী করে?’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, শুধু স্কুলের শিক্ষার সরঞ্জামই নয়, ছোটখাটো মেরামতি, যেমন চেয়ার-টেবিল ভেঙে গেলে তা সারানো, স্কুল ভবনের ছোটখাটো মেরামতি কম্পোজ়িট গ্রান্ট দিয়ে করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্রের মতে, ‘‘স্কুলের পড়ুয়াদের থেকে বছরে মাথাপিছু বেতন বাবদ ২৪০ টাকা পাওয়া যায়। ওই টাকায় স্কুলের দৈনন্দিন খরচ চলে না। ফলে স্কুলের শিক্ষকেরা তাকিয়ে থাকেন কম্পোজ়িট গ্রান্টের দিকে। এখন প্রশ্নপত্র ছাপানোর খরচ অনেক। এই প্রশ্নপত্র ছাপানোর খরচই বা স্কুল কোথা থেকে পাবে? এখন প্রায় সব স্কুলেই ক্লাসঘরে পাখা রয়েছে। এই খাতে বিদ্যুতের বিলের টাকা দিতে গিয়েও হিমশিম অবস্থা।’’
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডার কথায়, ‘‘এমনিতেই বহু প্রাথমিক স্কুলের পরিকাঠামো খারাপ। এর ফলে পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে। পড়ুয়ার সংখ্যা কমায় কম্পোজ়িট গ্রান্ট বাবদ টাকাও কমছে। ফলে স্কুলগুলোর হতশ্রী অবস্থা ঘুচছে না। দ্রুত কম্পোজ়িট গ্রান্ট দেওয়ার জন্য আমরা বিকাশ ভবনকে চিঠি লিখেছি।’’ আনন্দ জানিয়েছেন, যে সব প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৩০ জনের মধ্যে, তারা পাঁচ হাজার টাকার মতো পায়। ৩০-এর উপরে হলে সাড়ে ১২ হাজার মতো। ১০০-র বেশি হলে ২৫ হাজার টাকা পায়।
স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের একাংশের মতে, শিক্ষা দফতর বার বার বলছে, কেন্দ্র কম্পোজ়িট গ্রান্ট বাবদ তাদের অংশের টাকা দিচ্ছে না। তাঁদের প্রশ্ন, “কেন্দ্র যদি না-ও দেয়, তা হলে রাজ্য কেন তার অংশের টাকা দিচ্ছে না? আবাস যোজনা থেকে শুরু করে অনেক প্রকল্প তো আছে, যেগুলিতে কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে টাকা দেয়। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র টাকা না দিলেও তো রাজ্য দিয়ে দেয়।” শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারীর অভিযোগ, “বহু বিদ্যালয় ঋণ নিয়ে কাজ চালাতে বাধ্য হচ্ছে।”
শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, চলতি বছরের কম্পোজ়িট গ্রান্টের বরাদ্দ টাকা অনুমোদনের জন্য অর্থ দফতরে পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায়, দ্রুত অনুমোদন হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে চলতি মাসের শেষের দিকেই এই টাকা স্কুলে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। শিক্ষকদের একাংশের প্রশ্ন, নভেম্বরের শেষে এই টাকা এলে তা দিয়ে স্কুলের প্রয়োজনীয় ছোটখাটো মেরামতি করা কি সম্ভব হবে? কারণ, স্কুলে শুরু হচ্ছে তৃতীয় বা ফাইনাল পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট। এই সময়ে এ সব কাজ করা কী ভাবে সম্ভব?