ভোটের রাস্তা সুগম করতেই কি সড়কে নজর কেন্দ্রের? ফাইল চিত্র।
বাংলায় জাতীয় সড়ক নির্মাণ এবং তার সম্প্রসারণে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ করার কথা ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। ১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক (পূর্বতন ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক)-এর পাশে প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রানিগঞ্জ বাইপাস তৈরি করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ৪ লেনের ওই বাইপাসটি তৈরি করার জন্য ইতিমধ্যেই প্রায় ৪১১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক। প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা, সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক সব কিছুরই দায়িত্বে থাকবে। আপাত ভাবে এটিকে রাজ্যের উন্নয়নে কেন্দ্রের পদক্ষেপ বলে মনে হলেও এর মধ্যে রাজনীতির সূক্ষ অঙ্ক দেখতে পাচ্ছেন কেউ।
১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক শুরু হয়েছে মুর্শিদাবাদের মোড়গ্রাম থেকে। তার পর বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরে সেটি শেষ হয়েছে। রামপুরহাট, সিউড়ি, রানিগঞ্জ, গড়বেতা কিংবা শালবনির মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গার উপর দিয়ে গিয়েছে এই জাতীয় সড়ক। মূলত রাজ্যের জঙ্গলমহলকে ছুঁয়ে যাওয়া এই সড়ক ধরে ভোটের অঙ্কও কষছেন কেন্দ্রের শাসকদলের নেতারা। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের এই অংশ থেকে আশাতীত সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, বর্ধমান (পশ্চিম) লোকসভা আসনে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্যে সেই সাফল্যের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখতে পারেনি পদ্মশিবির। বিজেপির ‘কঠিন ঠাঁই’য়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে উঁকিঝুঁকি দিয়েছিল ঘাসফুল। বীরভূমে শাসকের ‘কেষ্টভূমি’তেও বিশেষ দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি।
শিয়রেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার পর ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে রাজ্যের এই অংশে নিজেদের ভোটকে সুসংহত করতে চাইছেন মোদী-শাহেরা। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে রাজ্যের তৃণমূল সরকার যখন তাদের রাজনৈতিক অস্ত্রে শান দিচ্ছে, তখন আক্রমণ প্রতিরোধে সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কেই হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি। গডকড়ী অবশ্য শুক্রবার টুইট করে জানিয়েছেন, রাজ্যের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মস্থান এবং শিল্পতালুকের মধ্যে রাজ্যের বাকি অংশের নিবিড় সংযোগের জন্যই এই সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী এ-ও জানিয়েছেন যে, রানিগঞ্জ বাইপাস তৈরি হয়ে গেলে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি থেকে দক্ষিণবঙ্গ ছুঁয়ে উত্তরবঙ্গ কিংবা উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে যাওয়া আরও সহজ হবে। পরিবহণ মন্ত্রকের কর্তারা জানাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রান্তিক অঞ্চলগুলিকে মূল অংশের সঙ্গে জুড়তে যে ‘গতিশক্তি’র কথা বলছেন, তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই এই পদক্ষেপ। তবে এর মধ্যে জাতীয় সড়কের মাধ্যমে ভোটের রাস্তা প্রশস্ত করারও অঙ্ক দেখতে পাচ্ছেন কেউ কেউ।