মিড-ডে মিলে মাংস, পটল-চিংড়ি, পায়েস

শুধু এই স্কুলই নয়, রাজ্য জুড়েই এ দিন মিড-ডে মিলে বৈচিত্র্য। কোথাও মাছ, শুক্তো, কোথাও মাংস, কোথাও সঙ্গে রসগোল্লা, দই বা মিহিদানা। এমনকি কোল্ড ড্রিঙ্কও! 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:২৫
Share:

ফাইল চিত্র।

মেনুটা চমকে দেওয়ার মতোই!

Advertisement

ভাত, ডাল, আলু-পকোড়া, আনাজের তরকারি, পটল-চিংড়ি, মুরগির মাংস, পাঁপড় এবং চাটনি। এই খাদ্য-তালিকা কোনও অনুষ্ঠান-বাড়ির নয়। বৃহস্পতিবার ‘শিক্ষক দিবস’-এ চুঁচুড়া বালিকা বাণীমন্দির স্কুলের মিড-ডে মিলের। ক’দিন আগেও যে স্কুলের পড়ুয়াদের নুন-ভাত খেতে হচ্ছিল, সেই স্কুলেই ওই আয়োজন!

শুধু এই স্কুলই নয়, রাজ্য জুড়েই এ দিন মিড-ডে মিলে বৈচিত্র্য। কোথাও মাছ, শুক্তো, কোথাও মাংস, কোথাও সঙ্গে রসগোল্লা, দই বা মিহিদানা। এমনকি কোল্ড ড্রিঙ্কও!

Advertisement

হলটা কি? আগেও ‘শিক্ষক দিবস’ এসেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাতে ফুল-বই, কলম বা অন্য উপহার তুলে দিতে দেখা গিয়েছে ছাত্রছাত্রীদের। কোথাও কোথাও শিক্ষকেরা পড়ুয়াদের পাল্টা উপহার দিয়েছেন বা কিছু খাইয়েছেন—এমন নজিরও রয়েছে। কিন্তু এ বার অন্য ছবি। চাল বাদে মিড-ডে মিলের জন্য পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াপিছু বরাদ্দ থাকে মাত্র ৪ টাকা ৮১ পয়সা। তার থেকে উঁচু ক্লাসে ছাত্রপ্রতি ৬ টাকা ৪৫ পয়সা। এই টাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার দেওয়া মুশকিল, এ কথা প্রায় সব স্কুল কর্তৃপক্ষই স্বীকার করেন। কিন্তু এ দিন আর ওই সরকারি বরাদ্দের দিকে তাকিয়ে ছিলেন না তাঁরা। বেশিরভাগ জায়গাতেই শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজেরা চাঁদা তুলে পড়ুয়াদের খাইয়েছেন। অনেকেই মানছেন, চুঁচুড়ার স্কুলটি নুন-ভাতের মেনু সামনে আসার পরে যে বিতর্ক শুরু হয়, তা থেকেই এ বার অন্য রকম কিছু করার ভাবনা কাজ করেছে। চুঁচুড়ার স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিক্ষিকারা নিজেরা চাঁদা তুলেছেন এ দিনের জন্য। অন্য রকম মিড-ডে মিল খেয়ে মেয়েরা খুব খুশি।’’

কলকাতার খিদিরপুর অ্যাকাডেমির কথাও ধরা যাক। এ দিন পড়ুয়াদের খাদ্য-তালিকায় ছিল ভাত, ডাল, আলু-পোস্ত ভাজা, মুরগির মাংস, চাটনি। শেষে কোল্ড ড্রিঙ্ক। প্রধান শিক্ষক শেখ মহম্মদ সালিহিন বলেন, ‘‘মিড-ডে মিলে তো খুব সাধারণ মেনু থাকে। ডিম-ভাতের বেশি কিছু কোনও দিন পড়ুয়াদের খাওয়াতে পারিনি। খুব ইচ্ছা ছিল, একদিন ওদের মাংস-ভাত খাওয়াব। তাই আমরা এ দিনটা বেছে নিই। মাংস-ভাতটা প্রতীকী। বরাদ্দ বাড়ানো হলে পড়ুয়াদের এমনই ভাল, পুষ্টিকর খাবার দেওয়া যায়।’’

এত রকম খাবারের কথা ভাবতেই পারেনি পড়ুয়ারা। অষ্টম শ্রেণির একদল ছাত্র বলে, ‘‘প্রতি বছর শিক্ষক দিবসে অনুষ্ঠানের পরে কেক-প্যাটিস জাতীয় খাবার খাওয়ানোই রেওয়াজ ছিল। এ বার সত্যিই শিক্ষকেরা আমাদের চমকে দিয়েছেন। সারা জীবন মনে থাকবে।’’

বাঁকুড়ার রাইপুর দুন্দা সোনাগড়া আশুতোষ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক সুকুমার পাইন, সারেঙ্গা হাইস্কুলের শিক্ষক গৌতম দাসেরা জানান, শুধু অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নয়, সমস্ত পড়ুয়াকেই এ দিন রকমারি পদ খাওয়ানো হয়েছে। খরচ দেন শিক্ষকেরাই। বৃষ্টির জন্য প়ড়ুয়াদের আবদার মেনে পুরুলিয়ার বিভিন্ন স্কুলে খিচুড়ির সঙ্গে মাছ বা মাংস খাওয়ানো হয়। ফালাকাটার বকরিবাড়ি বোর্ড ফ্রি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিলে পড়ুয়াদের খাওয়ানো হল লুচি, পায়েস ও তালের বড়া। একই রকম বৈচিত্র্যের মিড-ডে মিলের ছবি দেখা গিয়েছে রাজ্য জুড়েই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement