বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, আব্বাস সিদ্দিকি এবং বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। ফাইল চিত্র।
মধ্য রাত পর্যন্ত বৈঠকের পরেও অমীমাংসিত রয়ে গেল জোটের আসন রফা। বামেরা রাজি থাকলেও আসন নিয়ে আব্বাস সিদ্দিকির দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর দাবি মেনে নেয়নি কংগ্রেস। রফা খুঁজতে ফের বৈঠকে বসবে দু’পক্ষ।
বুধবার রাতে আসন রফা চূড়ান্ত করতে সিপিএমের সদর দফতর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বৈঠকে বসেন তিন দলের নেতারা। সিপিএমের তরফে ওই বৈঠকে ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম। কংগ্রেসের তরফে ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। আইএসএফ-এর তরফে ছিলেন দলের চেয়ারম্যান নৌসাদ সিদ্দিকি। সূত্রের খবর, বৈঠকে বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্বকে নিজেদের পছন্দের আসন-তালিকা দেন আইএসএফ চেয়ারম্যান। সেখানে ৪০-৪৫টি আসনের দাবি ছিল। ওই তালিকা হাতে পেয়ে বাম নেতৃত্ব আলোচনাসাপেক্ষে জোট দ্রুত কার্যকরী করার কথা বলেন। কিন্তু বেঁকে বসে কংগ্রেস। তারা জানায়, মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরে কোনও আসনই আইএসএফ-কে ছাড়া যাবে না।
উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের দাবি আইএসএফ মেনে নিলেও, দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে তারা দলের প্রভাবের কথা মনে করিয়ে দেয়। সূত্রের খবর, দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে আব্বাসের দল এমন কিছু আসনের দাবি জানিয়েছে যেগুলো ২০১৬ সালের ভোটে কংগ্রেস জয়ী হয়েছিল। তালিকায় উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া ও নদিয়ার কালীগঞ্জ বিধানসভার উল্লেখ থাকায় খানিক বিব্রত হন কংগ্রেস নেতারা। তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেন, জেতা আসন কোনও ভাবেই আইএসএফ-কে ছাড়া সম্ভব নয়। ওই আসনগুলি বাদ দিয়ে আলোচনা হোক। ঘটনাচক্রে, বুধবারের বৈঠকে প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী না যাওয়ায় আসন রফা নিয়ে চূড়ান্ত কথা দিতে পারেননি মান্নান-প্রদীপরা। তাই তাঁরা আইএসএফ নেতা নৌসাদকে তালিকার একটি কপি তাঁদের দিতে বলেন। অধীরের সঙ্গে আলোচনা করে দুই প্রবীণ নেতা তাঁদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন। তাই মনে করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার আরও এক দফা আলোচনায় বসে জোটের মীমাংসা হতে পারে।
সূত্রের খবর, কংগ্রেস নেতারা বেরিয়ে যাওয়ার পর বাম নেতৃত্বের সঙ্গে আরও কিছু ক্ষণ বৈঠক হয় নৌসাদের। জানা গিয়েছে, কংগ্রেস তিন জেলা-সহ বেশ কিছু আসন ছাড়তে রাজি না হওয়ায় বামফ্রন্টের কাছে আরও বাড়তি আসনের দাবি করেন আইএসএফ নেতা। এ ক্ষেত্রে বিমান-সেলিমরা প্রথমে সে ভাবে রাজি না হলেও, পরে বিষয়টি ভেবে দেখার আশ্বাস দেন।
মঙ্গলবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে অধীর-বিমানরা বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও আইএসএফের জোটের ঘোষণা করলেও, তা মানতে চাননি নৌসাদ। কিন্ত এখন, বৈঠকে আসন রফা চূড়ান্ত না হলেও জোট গঠনে অনেকটাই আশাবাদী তিনি। বৈঠক থেকে বেরিয়ে আইএসএফ নেতা বলেন, ‘‘বামফ্রন্টের সঙ্গে আমাদের জোট ঘোষণা এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। তবে কংগ্রেস নেতৃত্বকে আমরা উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ নিয়ে আসনের তালিকা দিয়েছি। আশা করছি তাঁরা বৃহস্পতিবারই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’’