পুরভোট নিয়ে সরগরম রাজ্য
ভোটের আগেই রাজ্যের একাধিক পুরসভায় কার্যত জয় নিয়ে শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। এই বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেও প্রশ্ন উঠছে। সেই আবহে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিরোধী প্রার্থীদের উপর হামলা, শাসানি, ধমকানির অভিযোগ শাসকদলের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের হুগলি, বীরভূম থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গের মালদহ, কোচবিহার একাধিক জেলা থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের ভোটে লড়তে না দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। একাধিক জায়গায় প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিলের ঘটনায় শাসকলদলের বিরুদ্ধে চক্রান্তেরও অভিযোগ তুলছে বিজেপি। যদিও এই সব অভিযোগকে গুরুত্ব না দিয়ে বিষয়টিকে বিরোধীদের ‘সাংগঠনিক ব্যর্থতা’ বলেই তুলে ধরতে চাইছে জোড়াফুল শিবির।
শুক্রবারই হুগলির তারকেশ্বর পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থীর বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই ওয়ার্ডের প্রার্থী সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর বাড়িতে তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে। প্রার্থিপদ তুলে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান তথা ওই ওয়ার্ডের প্রার্থী স্বপন সামন্ত বলেন, ‘‘প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনও অশান্তি ঘটে থাকতে পারে। তৃণমূল জড়িত নয় এর সঙ্গে।’’
বীরভূমের রামপুরহাট পুরসভা থেকেও একই অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। ওই পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী দীনেশ মণ্ডলের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর চালায় শাসকদলের দুষ্কৃতীরা। পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তাঁর দাদার বাড়িতেও একই ভাবে হামলা চালানো হবে তাঁর অভিযোগ। এই অভিযোগ উড়িয়ে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সৌমেন ভগৎ বলেন, ‘‘এটা বিজেপি-র অন্তর্কলহ।’’ ২ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী আনোয়ার হোসেনের বাড়িতেও শাসকদলের লোকজন চড়াও হয়ে প্রার্থিপদ তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মালদহের ইংরেজবাজার পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী কাকলি চৌধুরীর উপর হামলারও অভিযোগ উঠেছে শাসকশিবিরের বিরুদ্ধে। ঘটনাচক্রে, গত পুরবোর্ডে তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলার ছিলেন কাকলির স্বামী পরিতোষ চৌধুরী। এই পুরভোটে তৃণমূল তাঁকে টিকিট না দেওয়ায় নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছেন স্ত্রী কাকলি। প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন মাথাভাঙ্গা পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী অভিজিৎ সিংহ । তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের সন্ত্রাসের চাপেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ বলেন, ‘‘এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সিপিএমের জনসমর্থন নেই, ওরা এই ধরনের নাটক করছে।’’
অন্য দিকে, দিনহাটার পর সিউড়ি পুরসভাও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করেছে তৃণমূল। এরই সঙ্গে বোলপুর পুরসভার ১৩, ১৮, ১৯ এবং ২০ নম্বর ওয়ার্ডও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তারা জিতে নিয়েছে বলে দাবি করল তৃণমূল। অন্য দিকে, পশ্চিম বর্ধমানের কালনা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী মণিপ্রভা ভাদুড়ির মনোনয়ন বাতিল হয়েছে গিয়েছে শুক্রবার। মণিপ্রভা পুরসভার বেতনভুক স্বাস্থ্যকর্মী। ওই চাকরি ছাড়ার আগেই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বলে তাঁর প্রার্থিপদ বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মহকুমা শাসক। যদিও এই দাবি অস্বীকার করে সিপিএম প্রার্থীর বক্তব্য, তিনি পুরসভা থেকে বেতন পান না। তৃণমূলের চক্রান্তেই তাঁর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। মণিপ্রভার অভিযোগ খারিজ করে ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অবশ্য বলেন, ‘‘আইন আইনের পথেই চলবে।’’