Human trafficking

পাচার চক্র! রহস্য জিআরপি ঘিরেই

আসল সত্য জানা এবং সন্দেহের অবসান ঘটানোর তাগিদে নিজেরাই স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্য নিয়ে সোমবার দুই কিশোরী পৌঁছে যায় দক্ষিণ বারাসত স্টেশনে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৯ ০৩:১৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

চাকরির আশ্বাস দিয়ে যে ডাকছে, সে নাবালিকা। কাজ চাইছে যারা, তারাও কিশোরী। একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া, সেই দুই কর্মপ্রার্থী কিশোরীর সন্দেহ হয়েছিল, সমবয়সি একটি মেয়ে তাদের ‘ভাল’ চাকরি দেবে কী করে!

Advertisement

আসল সত্য জানা এবং সন্দেহের অবসান ঘটানোর তাগিদে নিজেরাই স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্য নিয়ে সোমবার দুই কিশোরী পৌঁছে যায় দক্ষিণ বারাসত স্টেশনে। তারা স্টেশন ম্যানেজারকে সব জানিয়ে জিআরপি-র সাহায্য নিয়ে পৌঁছে যায় চাকরি দেওয়ার নাম করে ডেকে পাঠানো সেই কিশোরীর কাছে।

কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যেই সব হিসেব উল্টে যায় বলে জানায় ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার। অভিযোগ, চাকরি দেওয়ার নাম করে যে-মেয়েটি অন্যদের ডেকেছিল, সে নিতান্তই কিশোরী। চাকরি দেওয়ার জন্য সন্ধ্যার পরে একটি নাবালিকা কেন অন্য কিশোরীদের ডাকবে, তার পিছনে কোনও চক্র আছে কি না, তা জানতেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকজন এবং উড়েলচাঁদপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মন্টু বৈরাগী চাকরিপ্রার্থী মেয়েদের সঙ্গে গিয়েছিলেন। কিন্তু জিআরপি তিনটি মেয়েকেই তাদের দফতরে নিয়ে যাওয়ার পরে রহস্য ঘোরালো হয়ে ওঠে। ২০-২৫ জন যুবক হঠাৎ উদয় হয়ে বারুইপুর জিআরপি-র ওসি লোকনাথ ঘোষকে কিছু বলে। ওসি চাইল্ডলাইনকে ডেকে অন্য কথা বলে তিনটি মেয়েকেই হোমে পাঠিয়ে দেন। চাকরিপ্রার্থী দুই পড়ুয়ার বাড়ির ঠিকানা, অভিভাবকদের নাম জানা সত্ত্বেও কেন তাদের হোমে পাঠানো হল, প্রশ্ন তুলছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

Advertisement

দক্ষিণ বারাসত স্টেশনে সে-দিন ঠিক কী ঘটেছিল, তা বিস্তারিত ভাবে জানিয়ে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী সীমা মণ্ডল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার শিশু কল্যাণ সমিতির কাছে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি জানানো হয়েছে ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসক, রাজ্যের শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন এবং সিআইডি-র এডিজি-কে। প্রশ্ন উঠছে, কিসের ভিত্তিতে জিআরপি তিনটি মেয়েকেই হোমে পাঠিয়ে দিল? তারা কি কোনও চক্রকে আড়াল করতে চাইছে?

ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অভিযোগ, একটি নাবালিকা কী ভাবে অন্য দুই নাবালিকাকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সন্ধ্যায় স্টেশনে ডেকে পাঠাল, বারুইপুর জিআরপি-র ওসি তার কোনও তদন্তই করেননি। উল্টে দুই পড়ুয়াকে হোমে পাঠানোর ভয় দেখিয়ে তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী সীমাদেবীকে দিয়ে লিখিয়ে নেন, পুরো ব্যাপারটাতেই একটা ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়েছে। সীমাদেবী বলেন, ‘‘আমায় ভয় দেখানো হল, দুই পড়ুয়াকে হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যে-মেয়েটি অন্যদের ডেকে পাঠিয়েছিল, তার প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝতেই কর্মপ্রার্থী মেয়ে দু’টির সঙ্গে গিয়েছিলাম। সেই মুহূর্তে ওদের কথা ভেবে আমি লিখে দিই। কিন্তু পুরোটাই জোর করে করানো হয়েছে।’’ লিখিয়ে নেওয়ার পরেও জিআরপি-র ওসি ওই দুই পড়ুয়া নাবালিকাকে হোমেই পাঠিয়ে দেন। এ দিন বিকেলে শিশু কল্যাণ সমিতির নির্দেশে ওই দুই পড়ুয়াকে বাড়ির লোকের হাতে দেওয়া হয়।

যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বারুইপুর জিআরপি-র ওসি লোকনাথবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ওই কর্মী (সীমাদেবী) স্বেচ্ছায় সব জেনেই লিখেছেন।’’ ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অভিযোগ পেয়ে শিশু কল্যাণ সমিতি তাদেরই নির্দেশ দিয়েছে, যে-মেয়েটি চাকরি দেওয়ার নাম করে দুই পড়ুয়াকে ডেকেছিল এবং যে-সব যুবক পরে স্টেশনে পৌঁছেছিল, তাদের উদ্দেশ্য বা কাজ কী, সেই বিষয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট পেশ করা হোক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement