কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস। —ফাইল চিত্র।
গিয়েছিলেন শিবের মাথায় জল ঢালতে। ফেরার পথে গেরুয়া পরিহিত সেই সব পুণ্যার্থীর একাংশই বুধবার ডালখোলায় শিয়ালদহমুখী কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসের সংরক্ষিত কামরায় তাণ্ডব চালান। তাঁদের হাঁকডাক-হুঙ্কার-হুমকিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ওই ট্রেনের যাত্রীরা।
বুধবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ। যাত্রীদের অনেকেই রাতের খাওয়া শেষ করে ঘুমোনোর তোড়জোড় করছিলেন। আচমকা গেরুয়া পোশাক পরা ২০-২৫ জন পুণ্যার্থী এস-১ কামরার দরজা খোলার জন্য ধাক্কা দিতে থাকেন। যাত্রীদের অভিযোগ, এক মহিলার আসনের জানলার কাচ তুলে তাঁকে দরজা খুলে দিতে বলা হয়। রেল পুলিশের কর্তব্যরত কর্মী ওই পুণ্যার্থীদের সাধারণ কামরায় যেতে বললে কামরা থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় তাঁকে। তার পরে কামরার পিছনের দরজা খোলা পেয়ে ওই দলের কয়েক জন ভিতরে ঢুকে পড়েন। উত্তরবঙ্গ থেকে ফেরা ২০-২৫ জন কলেজছাত্রীর একটি দল সেখানে ছিল। উচ্ছৃঙ্খল পুণ্যার্থীদের একাংশ তাঁদের সঙ্গেও অভব্যতা করেন বলে অভিযোগ। পরে কামরার অন্য যাত্রীরা চেঁচামেচি শুরু করায় আগন্তুকেরা সাময়িক ভাবে বিরত হন। কিছু পরে বারসইয়ের কাছে মুকুরিয়া স্টেশনে আচমকা চেন টেনে তীর্থযাত্রীরা নেমে পড়েন। নেমেই কামরার জানলা লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি ইটপাথর ছুড়তে থাকেন তাঁদের অনেকে। তাতে বেশ কিছু জানলার কাচ ভেঙে যায়।
কর্তব্যরত পুলিশকর্মী এবং টিকিট পরীক্ষক বারবার ফোন করে বাহিনী চেয়ে পাঠান। কিন্তু কাউকেই পাওয়া যায়নি। পুবালি রানা নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘পুণ্যার্থীদের তাণ্ডবের মুখে টিকিট পরীক্ষককেও অসহায় দেখাচ্ছিল।’’ ওই কামরার অন্য দুই যাত্রী শৌভিক দে ও মানস নাথ জানান, ট্রেন মালদহে পৌঁছলে রেল পুলিশ খোঁজখবর শুরু করে। কামরায় অতিরিক্ত নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়।
রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তীর্থযাত্রীরা মুকুরিয়ার কাছে বিহারের গোরক্ষপুরে একটি শিবমন্দিরে জল ঢালতে গিয়েছিলেন। তাঁদের জন্য উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের কর্তৃপক্ষ কেন আলাদা লোকাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেননি, সেই প্রশ্নও উঠছে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক প্রণবজ্যোতি শর্মা বলেন, ‘‘কাটিহার ডিভিশন ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
উত্তরবঙ্গের ট্রেনগুলিতে যাত্রী-নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বারবার। মাসখানেক আগে মালদহের কাছে পদাতিক এক্সপ্রেসের বাতানুকূল কামরার যাত্রীদের মারধর করে লুটপাট চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। সম্প্রতি রাতের ট্রেনে নিরাপত্তা নিয়ে রেল পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের কর্তারা।