প্রতীকী ছবি।
‘কাটমানি’-কাণ্ডে পড়ল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ‘ছায়া’। তা তৃণমূলের অন্দরেই হোক, বা বিজেপির। বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া, উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার, উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের ঘটনায় তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। রাজ্যের অন্যত্র কাটমানি নেওয়ার অভিযোগে ঘেরাও, বিক্ষোভ, পোস্টার দেওয়া অব্যাহত ছিল এ দিন।
কাটোয়ার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা বাসুদেব রায়ের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার কাটমানি নেওয়ার অভিযোগে পোস্টার পড়ে। বিক্ষোভও হয়। ওই ওয়ার্ডের কার্যালয় বন্ধ করে দেন দলের শহর সভাপতি অমর রাম। এ দিন কার্যালয়টি ভেঙে দেয় কাটোয়া পুরসভা। বাসুদেব পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত। কার্যালয়টি অমরের ‘দখলে’ যাওয়ায় এই পদক্ষেপ বলে দাবি তৃণমূল সূত্রের। বিরোধীদের টিপ্পনী, ‘‘কাটমানি-কাণ্ডেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অব্যাহত তৃণমূলের।’’ যদিও রবিবাবু বলেন, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতেই কার্যালয়টি ভাঙা হয়েছে। এর সঙ্গে কাটমানি বা অন্তর্দ্বন্দ্বের কোনও সম্পর্ক নেই।’’
কাটমানি নিয়ে মুখ খোলায় তাঁর বাড়ি তাক করে বোমাবাজির অভিযোগ তোলেন আলিপুরদুয়ারের প্রবীণ তৃণমূল নেতা জহর মজুমদার। তিনি আলিপুরদুয়ার আদালতের সরকারি আইনজীবীও। সূত্রের দাবি, তাঁর পাশে দাঁড়ানোর প্রশ্নে স্থানীয় বার কাউন্সিলের সদস্যেরা ভাগ হয়ে গিয়েছেন। এক পক্ষ বোমাবাজির প্রতিবাদে পুলিশ-প্রশাসনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্য পক্ষ জহরবাবুর অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ।
উত্তর ২৪ পরগনার কাউগাছি ১ পঞ্চায়েতে ১ জুন বিজেপিতে যোগ দেন তৃণমূলের বুলা সিকদার। এ দিন তাঁর বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির কিছু কর্মী। বুলা অভিযোগ মানেননি।
বারাসতে মিলন সর্দার নামে এক তৃণমূল কাউন্সিলরের বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ হয়। মিলনের দাবি, ‘‘ওয়ার্ড উন্নয়ন ফান্ডের জন্য পুরসভার তরফে টাকা নেওয়া হয়েছে। আমি এক টাকাও নিইনি।’’ হাড়োয়া, ক্যানিং, পাণ্ডুয়া, ভাতার, মাথাভাঙা, খড়্গপুর-২, দাঁতন-২ ও নারায়ণগড়ে এ দিন বিক্ষোভ হয়েছে। খড়্গপুর-২ ব্লকের মেউদিচকে তৃণমূলের বুথ সভাপতি অরবিন্দ দত্ত টাকা ফেরতের ‘মুচলেকা’ দেন। মেদিনীপুর শহর, পূর্ব মেদিনীপুরের চৈতন্যপুরে পড়েছে অভিযোগের পোস্টার।
ইসলামপুরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শম্পা ছেত্রীর (তালুকদার) বাড়ির দেওয়ালে ‘চোর’ লিখে দেওয়া হয়। কাটমানি ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছে বিজেপি। শম্পা ফোন ধরেননি। ইসলামপুরের পুরপ্রধান তৃণমূলের কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেন, ‘‘অভিযোগ এলে অবশ্যই সেই কাউন্সিলরকে বলব, যেন টাকা ফেরত দিয়ে পুরসভাতে আসেন।’’
পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডিতে আবার কাটমানি নেওয়ায় অভিযুক্ত সুইসা-তুন্তুড়ি পঞ্চায়েতের আবাস যোজনা প্রকল্পের পরিদর্শক সত্যনারায়ণ কাজী। সত্যনারায়ণবাবু অভিযোগ অস্বীকার করলেও, প্রশাসন তাঁকে সরিয়ে দিয়েছে। কাটমানির সমস্যা এড়াতে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পুরসভা ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’র টাকা উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছে। পুরপ্রধান সুবল সাহা বলেন, ‘‘কাউন্সিলরেরা কেউ, কোথাও টাকাপয়সা চাইলে উপভোক্তারা যেন সঙ্গে সঙ্গে আইনি সাহায্য নেন।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।