সোনাগাছিও অষ্টমীর সারারাত রান্নায় ব্যস্ত থাকবে গোটা শহরের সব ‘সহকর্মী’ ও তাঁদের পরিবারের নবমী ভোজের আয়োজনে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পুজো বলে তো আর ছুটি হয় না যৌনকর্মীদের। বরং, উৎসবের সন্ধ্যায় নতুন রং লাগে কলকাতার বিভিন্ন লাল রঙের পাড়ায়। বাড়তি রোজগারও হয়। দিনের বেলাতেও সংসারের রান্নাবান্না থেকে ছুটি নেই। কিন্তু এ বার পুরো ছুটি নবমীর দুপুরে। কলকাতার কোনও যৌনপল্লিতেই রান্না করতে হবে না। নিজেদের জন্য তো বটেই, পরিবারের বাকি সদস্যদের খাবারও আসবে সোনাগাছি থেকে। আর সোনাগাছিও অষ্টমীর সারারাত রান্নায় ব্যস্ত থাকবে গোটা শহরের সব ‘সহকর্মী’ ও তাঁদের পরিবারের নবমী ভোজের আয়োজনে।
সোনাগাছিতে এ বার দুর্গাপুজোর দশম বর্ষ। প্রতি বারই অষ্টমী পুজোর ভোগ কলকাতার অন্য সব যৌনপল্লিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। সেটাই এ বার আরও বড় আকারে। এই পুজোর আয়োজক সংস্থা দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির মুখপাত্র মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘করোনার কারণে আমাদের সদস্যরা অনেকেই কলকাতা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। গত বছর পুজোর আগে থাকতেই ফিরে আসা শুরু হয়। এখন অনেক যৌনকর্মীই ফিরে এসেছেন। ফলে এ বার উৎসবের আনন্দ অন্য বারের তুলনায় একটু বেশিই। আর সেই কারণেই ভোগ বিতরণের বিষয়টাকে আরও বড় করে ভাবা হয়েছে। শুধু যৌনকর্মীরাই নন, তাঁদের পরিবারের সকলের জন্যই খাবার যাবে নবমীর দুপুরে।’’ তা হলে তো সংখ্যাটা অনেক! মহাশ্বেতা জানান, ‘‘এখন কলকাতায় যৌনকর্মীর সংখ্যা ১৬ হাজারের মতো। প্রত্যেকের পরিবারে চার জন কর ধরলে ৬০ হাজারের বেশি মানুষের জন্য রান্না হবে।’’
গত কয়েক বছর ধরেই সোনাগাছির পুজোয় থিম শুরু হয়েছে। এ বার ‘প্রতিবাদ’ থিমে সাজানো হবে মণ্ডপ। চতুর্থীতে উদ্বোধন। সে দিন থেকে অষ্টমী পর্যন্ত প্রতি দিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে মসজিদ বাড়ি স্ট্রিটে। সঙ্গে যৌনকর্মীদের মধ্যে নানা রকম প্রতিযোগিতাও থাকবে। দুর্বারের সম্পাদক পুতুল সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের অনেকেই নানা দেবদেবীর পুজো করেন নিজের মতো করে। সকলের পুজো বলতে এই দুর্গাপুজো। অতীতে অনেক লড়াই করতে হয়েছে এই পুজোর জন্য। আদালতেও যেতে হয়েছিল। এখন পুজো স্থায়ী হয়ে গিয়েছে। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে এখন আমাদের পাড়ার পরিস্থিতিও একটু ভাল। তাই এ বার পুজো ঘিরে গোটা কলকাতাকে এক করে আনন্দ করার ভাবনা।’’
কী কী থাকবে নবমীর মেনুতে? দুর্বার সূত্রে জানা গিয়েছে, খুব বেশি কিছু আয়োজন নয়। খিচুড়ির সঙ্গে একটা তরকারি আর চাটনি, পায়েস। তবে সেটা যেন সকলে পান সেটাই মূল নজরে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু কলকাতাতেই নয়, সোনাগাছির মতো এখন রাজ্যের অন্য কয়েকটি শহরেও যৌনকর্মীরা দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন। তবে কলকাতায় শুধু সোনাগাছিতেই। সেখান থেকেই নবমীর দুপুরে খাবার যাবে বৌবাজের। সেখানে হাড়কাটা গলি, প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিট-সহ অনেকগুলি পাড়ায় রয়েছে যৌনপল্লি। দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাটের কাছে লকার মাঠ কিংবা টালিগঞ্জের ইউকে মণ্ডল লেনও যাবে খাবার। তবে উত্তর কলকাতার অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট, রামবাগান, শেঠবাগানের যৌনকর্মীরা সোনাগাছি এলাকার মসজিদ বাড়ি স্ট্রিটের পুজো প্রাঙ্গণেই চলে আসবেন। আবার গোটা শহরে যাঁরা ভ্রাম্যমান (ফ্লাইং) যৌনকর্মী তাঁদেরও পুজো মণ্ডপেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।