তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন। কিন্তু, দলের জেলা সভাপতি রয়েছেন জেলে। এই পরিস্থিতিতে বীরভূমের সব তৃণমূল বিধায়ককে ডাকা হল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলকাতার ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে। ডাক পেয়েছেন জেলার ছাত্র, যুব, মহিলা এবং শ্রমিক সংগঠনের সভাপতিরাও। আগামী ২৬ নভেম্বর বিকেল ৩টে নাগাদ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের অফিসে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলার একাধিক বিধায়ক ডাক পাওয়ার সত্যতা মেনে নিয়েছেন। তৃণমূলের বীরভূম জেলা সহ-সভাপতি তথা মুখপাত্র মলয় মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘শুধু বিধায়ক এবং শাখা সংগঠন নয়, ডাকা হয়েছে জেলার দুই সাংসদকেও। তবে দিল্লি যেতে হলে তাঁদের (সাংসদ) সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে না।’’ তৃণমূলের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি অনুব্রত-হীন জেলায় ধীরে ধীরে প্রভাব বাড়ছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের?
দলের একটি সূত্রের দাবি, গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতারের পরে তাঁকে জেলা সভাপতির পদে বহাল রাখলেও তাঁর জেলমুক্তির আশু সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। অথচ পঞ্চায়েত নির্বাচন এসে গিয়েছে। এর মধ্যে সেহগাল হোসেনের মতো ইডি অনুব্রতকেও দিল্লি নিয়ে যেতে পারে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না দল। ফলে, রাজ্য নেতৃত্বই জেলার সংগঠন নিয়ে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পরে সাংগঠনিক দিক সামাল দেওয়ার জন্য দুই সাংসদ-সহ আট জনের সমন্বয় কমিটি গড়া হয়েছে, যার মাথায় রয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। পাশাপাশি, একটি শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি গড়ে তার প্রধান করা হয় লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ (রানা) সিংহকে। কিন্তু, অনুব্রত-পরবর্তী নেতাদের মধ্যে কে বেশি প্রাধান্য পাবেন বা কাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে, তা নিয়ে দলে চাপা দ্বন্দ্ব আছে। শনিবার অনুব্রত আসানসোল এজলাসে দলের কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আমার অনুপস্থিতিতে চাঁদু (মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ) আর বিকাশের কথা শুনে চলবি।’’ অনুব্রতর এই বার্তার ঠিক আগে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর চিঠি এসেছে বীরভূমের নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসকের কাছে। সেখানেই অনুব্রতহীন জেলায় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে অভিজিতের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি বাড়ছিল, দল কার কথায় চলবে। কোর কমিটির আর কি কোনও ভূমিকা রইল? এক সঙ্গে চলার বার্তা দিলেও রবিবার সিউড়িতে জেলা কোর কমিটির বৈঠক এই প্রসঙ্গ উঠেছে বলেও তৃণমূল সূত্রের খবর। দলের ভিতরে সব ঠিক নেই বুঝেই কি বীরভূমের নেতৃত্বকে তলব করলেন অভিষেক, প্রশ্ন উঠছে দলে। জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষনেতার কথায়, ‘‘জেলায় সাংগঠনিক হাল হকিকত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের টিম যাচাই করে গিয়েছে। অনুব্রত নিজেও জানেন জেলায় সব কিছু ঠিক নেই। ফলে অভিষেক জেলার নেতাদের সঙ্গে বসবেন, সেটা মনেই হচ্ছিল। সেই প্রস্তুতি শুরু হল।’’