আইপিএস অফিসার রাজীব কুমার।—ফাইল চিত্র।
নিম্ন আদালত থেকে শীর্ষ আদালত পর্যন্ত মামলা ঘুরেছে, ঘুরছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা রুখতে আইপিএস অফিসার রাজীব কুমারের ‘রক্ষাকবচের’ আবেদন খারিজ করে দিলেন আলিপুর জেলা বিচারক।
গত সেপ্টেম্বরে সারদায় মামলা সিবিআইয়ের গ্রেফতারি এড়াতে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন তৎকালীন এডিজি সিআইডি। ওই ঘটনায় ১৯ সেপ্টেম্বর রাজীবকে গ্রেফতার করতে চেয়ে আলিপুর আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে আর্জি জানিয়েছিল সিবিআই। পাশাপাশি রাজীবের আইনজীবীরা ভারতীয় ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ৪৫ ধারা (১) ও (২)-র উল্লেখ করে আদালতে জানান, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কোনও সশস্ত্র বাহিনীর অফিসারকে গ্রেফতার করতে হলে সংশ্লিষ্ট সরকারের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। বিনা অনুমতিতে গ্রেফতার করা যাবে না। আদালত সে-ক্ষেত্রে রাজীবের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারে না।
তা ছাড়া এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৭ সালে একটি নির্দেশিকা দিয়েছিল। রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর কোনও অফিসারকে গ্রেফতার করা যাবে না বলে সেই নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বিচারক সুব্রত মুখোপাধ্যায় সে-দিন সিবিআইয়ের গ্রেফতারি পরোয়ানার আর্জি খারিজ করে বলেছিলেন, ‘‘সিবিআই যদি রাজীব কুমারকে অপরাধী মনে করে, তা হলে নিজেদের ক্ষমতাবলে তাঁকে গ্রেফতার করতে পারে। কোনও আইনগত বাধা নেই। সে-ক্ষেত্রে আদালতের পরোয়ানার প্রয়োজন নেই।’’ সেই সঙ্গে রাজীব কুমারের আইনজীবীদের আর্জিও খারিজ করেন বিচারক।
আলিপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, নভেম্বরে আলিপুরের জেলা বিচারকের এজলাসে রাজীবের আইনজীবীরা একই আবেদন করেন। সম্প্রতি সেই আর্জির শুনানি হয়। রাজীবের আইনজীবী গোপাল হালদার বিচারককে বলেন, ‘‘উল্লিখিত ধারা এবং রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী সরকারের অনুমতি ছাড়া রাজীবকে গ্রেফতার করা যাবে না বলে নির্দেশ জারি করা হোক।’’ রাজীবের আইনজীবীদের সেই আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন জেলা বিচারক অজয়কুমার গুপ্ত। আদালত সূত্রের খবর, রাজীব সেই সময় সিআইডি-র এডিজি ছিলেন। গোয়েন্দা-প্রধান কোনও ভাবেই সশস্ত্র বাহিনীর কেউ নন। সেই জন্য রাজীবের আবেদন খারিজ করা হয়েছে।
আলিপুর আদালতের সরকারি আইনজীবীদের একাংশ জানান, পরে হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন রাজীব। সেই জামিন খারিজ করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে সিবিআই। জামিন খারিজের আর্জির শুনানির সময় জেলা বিচারকের নির্দেশটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে রাজীবের আইনজীবীদের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারত। সে-ক্ষেত্রে যদি জেলা বিচারক ওই আর্জি মঞ্জুর করতেন, তা হলে সুপ্রিম কোর্টে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে সেটাকে রাজীবের ‘রক্ষাকবচ’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারতেন তাঁর আইনজীবীরা। কিন্তু তা নাকচ হয়ে যাওয়ায় ওই রক্ষাকবচ পাওয়া গেল না।