আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। — ফাইল চিত্র
অনলাইন ও অফলাইন বিতর্কে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন অবস্থান তো নিচ্ছেই। আবার একই বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে দুই ভিন্ন মোডে পরীক্ষা নিতে চাইছে। যেমন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সোমবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, স্নাতক পরীক্ষা নেওয়া হবে অনলাইনে এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষা অফলাইনে। তবে আসন্ন সিমেস্টার পরীক্ষা অফলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটছে না আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। তবে তারা অফলাইন পরীক্ষা কিছু দিন পিছিয়ে দিচ্ছে। আলিয়ার পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ তুলে নেওয়ার কথা জানালেও অনলাইনে পরীক্ষার নেওয়ার দাবিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের সামনে এ দিনেও বিক্ষোভ দেখান বহু ছাত্রছাত্রী।
ছাত্র আন্দোলনের মুখেও আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, তাঁরা অনলাইন নয়, অফলাইন পরীক্ষার পক্ষে। প্রয়োজনে তাঁরা পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে পারেন। শেষ পর্যন্ত এ দিন অফলাইন পরীক্ষা পিছিয়েই দেওয়া হল। এই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল ২৭ মে। এ দিন দুপুরে কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, অফলাইন পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ৬ জুন। শেষ হবে ১৭ জুন। পরীক্ষার নম্বর বিভাজনও পাল্টেছে।
কর্তৃপক্ষ জানান, নতুন নম্বর বিভাজনে ৪০% লিখিত পরীক্ষা, ৪০% অ্যাসাইনমেন্ট এবং ২০% শতাংশ ইন্টার্নাল অ্যাসেসমেন্ট বা অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন হিসেবে গণ্য করা হবে। আগে ছিল ৮০% লিখিত পরীক্ষা, ২০% নম্বর ছিল ইন্টারনাল অ্যাসেসমেন্টে। পড়ুয়াদের অধিকাংশ বিষয়টি সমর্থন করেছেন।
শনিবারের পরে এ দিনেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের সামনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়ারা এসে অনলাইন পরীক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের বক্তব্য, ক্যাম্পাসে ক্লাস হয়েছে খুব অল্প সময়। পাঠ্যক্রম শেষ হয়নি। বেশির ভাগ ক্লাস হয়েছে অনলাইনে। তাই তাঁরা অনলাইনেই পরীক্ষা চান।
স্বর্ণেন্দু নন্দী (বিক্ষোভকারী, পদার্থবিদ্যা বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র) নামে এক বিক্ষোভকারী জানান, সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও রেজিস্ট্রারকে তাঁরা এ দিন দাবিপত্র দিয়েছেন। শনিবারের মতো এ দিনের বিক্ষোভেও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) বেশ কয়েকটি চেনা মুখকে দেখা গিয়েছে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের বোর্ড অব স্টাডিজ় এবং স্নাতকোত্তরের ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল অবশ্য সর্বসম্মত ভাবে জানিয়েছে, পরীক্ষা অফলাইনে নেওয়া হোক। এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলির অধ্যক্ষদের সঙ্গে ২৭ মে আলোচনা করা হবে বলে জানান উপাচার্য। সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ৩ জুন সিন্ডিকেটের বৈঠকে। শিক্ষা শিবির সূত্রের খবর, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে যে-ভাবে অফলাইন পরীক্ষার পক্ষে অভিমত উঠে এসেছে, সিন্ডেকেটেও সেই মত গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এ দিন টিএমসিপি-র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের পক্ষ থেকে উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে পরীক্ষা কিছু দিন পিছিয়ে দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। অবশ্য আসন্ন সিমেস্টার পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার জন্য কিছু দিন আগেই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন টিএমসিপির রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য।
মৌলানা আজাদ কলেজের অধ্যক্ষ শুভাশিস দত্ত জানান, বেশ কিছু পড়ুয়াদের কাছ থেকে তিনি অনলাইন পরীক্ষার দাবি সংবলিত মেল পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কোনও পড়ুয়া জানাননি যে, পরীক্ষার দিন পিছিয়ে দেওয়া হোক। সিলেবাস শেষ করা হোক, তার পরে অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হোক।’’
যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায় বলেন, ‘‘২৭ মে বৈঠকে গিয়ে স্পষ্ট জানাব, যদি কলেজগুলো তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা থাকে, তা হলে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হোক!’’
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলির স্নাতক স্তরের পরীক্ষা অনলাইনে হবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। এ দিন উপাচার্যের ডাকা জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসমূহের নিয়ামক দেবাশিস দত্ত জানিয়েছেন, অনলাইনে কলেজগুলোর পরীক্ষা হবে। প্র্যাক্টিক্যাল অবশ্য দিতে হবে অফলাইনে। তা ছাড়া স্নাতকোত্তর বিভাগের পরীক্ষা অফলাইনে হবে।