বাঁকুড়া আদালত চত্বরে নিহত আকাঙ্ক্ষা শর্মার বাবা, ভাই এবং মা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
ইচ্ছে ছিল, এজলাসে বসে মেয়ের খুনির সাজা ঘোষণা শুনবেন। কিন্তু আদালতে পৌঁছনোর আগে রাস্তায় খবর পেলেন, খুনির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। ঘণ্টাখানেক পরে বুধবার দুপুরে বাঁকুড়া আদালতে পৌঁছে তাই আকাঙ্ক্ষা শর্মার বাবা শিবেন্দ্রনাথ শর্মা ও মা শশী শর্মা কিছুটা হতাশার সুরে বললেন, “আমরা ওর ফাঁসি চেয়েছিলাম।”
এক সময়ে বাঁকুড়ার রবীন্দ্রসরণির বাসিন্দা ব্যাঙ্ক আধিকারিক শিবেন্দ্রনাথবাবু এখন দুর্গাপুরে বাস করেন। এ দিন দুর্গাপুর থেকে তাঁদের নিয়ে আকাঙ্ক্ষার ভাই আয়ুষসত্যম শর্মা বাঁকুড়া আদালতে আসেন। আগে থেকেই আদালতে উপস্থিত ছিলেন তাঁদের পারিবারিক বন্ধু তথা বাঁকুড়া পুলিশ হাসপাতালের আধিকারিক প্রবীরকুমার চক্রবর্তী। প্রবীরবাবু বলেন, “গোটা ঘটনায় প্রথম থেকেই শর্মা পরিবারের সঙ্গে আমি রয়েছি। উদয়নের সর্বোচ্চ সাজা হবে সে আশা আমিও করেছিলাম।”
শশীদেবী বলেন, “সরকারি আইনজীবীই ফোন করে আমাদের জানিয়েছিলেন, উদয়ন মঙ্গলবার দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। শোনার পর থেকেই ওর সাজা কী হয় তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিলাম। সারা রাত ঘুমোতে পারিনি। রায় ঘোষণা নিজের কানে শুনব বলেই আদালতে এসেছিলাম। কিন্তু পথে আমাদের একটু দেরি হয়ে গেল।”
মেয়ের কথা মনে পড়তেই শশীদেবী বলে ওঠেন, “আকাঙ্ক্ষা মেয়ে হয়েও সব সময় বড় ছেলের মতো দায়িত্ব নিয়ে সব কাজ করত। কী করে যে এমন একটা প্রতারকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ল, আজও বুঝে উঠতে পারিনি।” আয়ুষসত্যম বলেন, “কোনও মানুষকে দেখে তো বোঝা যায় না, তার চরিত্র কেমন। উদয়ন যে তার বাবা-মায়ের খুনি, সেটা ওকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না। আমাদের পরিবারের খুশিটাই কেড়ে নিয়েছে ও।”
এ দিন আদালত কক্ষে উদয়ন নিজের জীবনের সদ্ব্যবহার করার ইচ্ছা প্রকাশ করে বিচারকের কাছে। সে কথা শুনে শশীদেবীর পাল্টা প্রশ্ন, “নিজের বাবা-মাকে খুন করে বছরের পর বছর ধরে তাদের টাকা তুলেছে। তাদের সম্পত্তি বিক্রি করেছে অর্থের লোভে। তার পরে আমার মেয়েকে ফাঁসিয়ে তাকে খুন করে নিজের বাড়িতে কবর দিয়েছিল। এমন এক জনের মানসিকতা কী ভাবে বদল হতে পারে?”
আকাঙ্ক্ষা খুনের ঘটনায় উদয়ন চূড়ান্ত শাস্তি থেকে রেহাই পেলেও নিজের বাবা-মায়ের খুনের ঘটনায় তার কী সাজা হয় সে দিকেই এখন তাকিয়ে শর্মা পরিবার। শশীদেবী বলেন, “আমার বিশ্বাস, বাবা-মাকে খুনের ঘটনায় ওর মৃত্যুদণ্ড হবে। তাই রায়পুর আদালতের রায়ের অপেক্ষায় রয়েছি।’’ শশীদেবীর পাশে দাঁড়িয়ে শিবেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “আমাদের যা যাওয়ার, তা চলে গিয়েছে। উদয়নকে তার কর্মফল পেতেই হবে। সেটুকু নিশ্চিত হোক।”