সওয়ারি: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে এসএফআইয়ের মিছিলে যাওয়ার আগে রিকশায় ঐশী ঘোষ। শুক্রবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
ক্যাম্পাসে ছাত্রভোটের প্রক্রিয়া চলছে। তাই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেই শুক্রবার সভা করলেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষ। ক্যাম্পাসের বাইরে মিছিলেও যোগ দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার কলেজ স্ট্রিটে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের সব ফটক বন্ধ করে দেওয়ায় গেটের বাইরেই সভা করেছিলেন ঐশী। যাদবপুর ক্যাম্পাসে তাঁর সভার ব্যাপারে আপত্তি তুলেছিল অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। তারা এ বারেই প্রথম যাদবপুরের ছাত্রভোটে লড়ছে। ঐশী এ দিন জানিয়ে দেন, এবিভিপি-কে বর্জন করতেই হবে। জানুয়ারিতে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের উপরে আক্রমণের ঘটনার পরে অভিযোগের আঙুল উঠেছিল এবিভিপি-র দিকে। সেই আক্রমণে আহত হন ঐশীও। ফেটে গিয়েছিল তাঁর মাথা। এ দিন সেই আহত ঐশীর ছবি এঁকে তাঁকে উপহার দেন যাদবপুরের এক ছাত্র। জেএনইউয়ে আক্রমণের আগে কিছু দিন ধরে ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন ঐশীরা। এ দিন ঐশী বলেন, ‘‘এবিভিপি ভেবেছিল, রড নিয়ে এসে আন্দোলন শেষ করে দেবে। কিন্তু পারেনি। পারবেও না। ওদের আছে সাভারকর, গোলওয়ালকর। আমাদের আছেন ভগত সিংহ, অম্বেডকর।’’ ওই ছাত্রনেত্রী জানান, আরএসএস, বিজেপি, এবিভিপি-র চোখে চোখ রেখে বলতে হবে, তোমাদের রাজনীতি আমরা মানছি না। ‘‘এখন লড়াই দেশ বাঁচানোর, এখন লড়াই ক্যাম্পাস বাঁচানোর,’’ বলেন ঐশী।
পড়াশোনার খরচ কমানোর দাবিতে এবং সংবিধান রক্ষার স্বার্থে এ দিন হাওড়ায় এসএফআইয়ের জেলা কমিটির ডাকা মিছিলে যোগ দেন ঐশী। শিবপুর আইআইইএসটি-র সামনে শুরু হয়ে মিছিল শেষ হয় হাওড়া ময়দানে। ঐশী বলেন, ‘‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকার উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ফি বাড়িয়ে শুধু আডবাণী, অম্বানীর ছেলেমেয়েদের পড়ার ব্যবস্থা করতে চাইছে। তাই এই শিক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে।’’ সিএএ বা সংশোধিত নাগরিক আইনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ারও ডাকা দেন ঐশী।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার ঐশীকে সভা করার জন্য ক্যাম্পাসে ঢুকতেই দেননি। শুক্রবার অবশ্য যাদবপুরে ছাত্রভোটের বিধির বাধা থাকায় ক্যাম্পাসের বাইরে সভা করেন তিনি। সন্ধ্যায় অবশ্য প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যেই সভা করেন ঐশী।
প্রেসিডেন্সির সভায় দেশ জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে সরব হন ওই বাম ছাত্রনেত্রী। ঐশী বলেন, ‘‘সকলকে সমান ভাবে শিক্ষার অধিকার দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি এমন হওয়া উচিত, যাতে প্রান্তিক স্তরের ছেলেমেয়েরাও পড়াশোনা করতে পারেন। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে রিকশাচালকের ছেলেও পড়েন। এটাই স্বাভাবিক।’’
দেশের আইআইটিগুলির ফি কেন এত বেশি হবে, এ দিন সেই প্রশ্নও তোলেন ঐশী। তিনি বলেন, ‘‘নতুন শিক্ষানীতি এবং ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে যে-প্রতিবাদ শুরু হয়েছে, তা চলবে। এই রাজ্যে মিছিল করতে যে-বাধা পেয়েছি, সেটা দুঃখজনক। এই ধরনের বাধা দেওয়ার ঘটনায়, এই ধরনের আচরনের মাধ্যমে আসলে কোথাও না কোথাও, কোনও না কোনও ভাবে আরএসএস এবং বিজেপি-কেই সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।’’