—প্রতীকী ছবি।
বাংলায় বিধানসভা ভোটে দলের ভরাডুবি হয়েছে। মুর্শিদাবাদ, মালদহের মতো জেলাতেও কোনও আসন জিততে তারা জিততে পারেনি। কিন্তু জোটের জন্যই এমন বিপর্যয় হয়েছে, এই সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর কারণ নেই বলে এআইসিসি-র পর্যালোচনা কমিটির কাছে মত দিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের একাংশ। তাঁদের মতে, কংগ্রেসের বক্তব্য মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করা যায়নি। রাজ্যে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক কৌশল ঠিক করার জন্য ভেবেচিন্তে এগোনোর পক্ষেই সওয়াল করলেন তাঁরা। প্রাথমিক আলোচনার পরে এআইসিসি নেতারা প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের কারও কারও কাছে সবিস্তার লিখিত মতামত চেয়েছেন।
পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ফল পর্যালোচনার জন্য মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চবনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি গড়েছে এআইসিসি। বাংলার নেতাদের সঙ্গে মঙ্গলবার থেকে ভার্চুয়াল আলোচনা শুরু করেছে ওই কমিটি। নেতারা যাতে খোলা মনে মত জানাতে পারেন, তার জন্য প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা অনলাইন সেশন করা হচ্ছে। আরও কয়েক দিন এই প্রক্রিয়া চলবে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। কমিটির প্রধান চবন অবশ্য এ দিনের আলোচনায় ছিলেন না। বাকি চার সদস্য সলমন খুরশিদ, মনীশ তিওয়ারি, ভিনসেন্ট পালা এবং জ্যোতি মানি রাজ্য নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী নির্বাচনী বিপর্যয় মেনে নিয়ে তাঁর রিপোর্টে জানিয়েছেন, বাংলায় এ বার অনেক ক্ষেত্রে মেরুকরণের ভোট হয়েছে। উত্তর দিনাজপুর, মালদহ বা মুর্শিদাবাদে তার ফলে বিজেপি হিন্দু ভোট টানতে পেরেছে, আবার বিজেপি-ভীতি থেকে সংখ্যালঘুরা ভোট দিয়েছেন তৃণমূলকে। রাজ্য সরকারের নানা ‘জনমোহিনী প্রকল্প’ও শাসক দলের পক্ষে গিয়েছে। কংগ্রেসের সংগঠন দুর্বল ছিল, তাদের রাজনৈতিক বক্তব্যও মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করা যায়নি। অনলাইন বৈঠকে মত জানাতে গিয়ে কংগ্রেস নেতাদের কেউ কেউ অবশ্য বলেছেন, সম্পূর্ণ মেরুকরণ সর্বত্র হয়নি। মূল কথা হল, বিজেপি-বিরোধী ভোট ভাগ করতে চাননি মানুষ। এই সূত্রেই একাধিক নেতা বলেছেন, বাম ও কংগ্রেসের জোট না থাকলে ফল অন্য রকম হত, এমন ধরে নেওয়ার জায়গা নেই। রাজ্যে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বাম ও কংগ্রেসের আসন-সমঝোতা হয়নি। তখনও কংগ্রেসের ফল ভাল হয়নি। যে দু’টি আসনে তারা জিতেছিল, সেখানে সিপিএম প্রার্থী দেয়নি। তবে এ বার জোটের সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও আসন-ভাগের আলোচনা শুরু করতে অনেক সময় নষ্ট করা হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গ উঠেছে আলোচনায়।
কংগ্রেসের অন্দরে চর্চা চলছে, এআইসিসি-র কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পরে কি প্রদেশ সভাপতি বদল হবে? এআইসিসি-র নেতাদের কাছে রাজ্যের এক নেতার বক্তব্য, গত ২০ বছরে ৭ বার প্রদেশ সভাপতি বদল হয়েছে। কিন্তু তাতে কংগ্রেসের কি উন্নতি হয়েছে? নিচু তলায় সংগঠন গড়তে না পারলে নেতা বদলে লাভ নেই। এক প্রদেশ নেতার কথায়, ‘‘এআইসিসি-র প্রতিনিধিরা এখন শুনছেন। পরে হয়তো হাইকম্যান্ড যা বলার, বলবে।’’