মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসন্ন দিল্লি সফরের আগেই প্রমাণ-সহ বকেয়ার পূর্ণাঙ্গ তথ্য রিপোর্ট আকারে তৈরির নির্দেশ দিল প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল। অর্থ দফতর এ নিয়ে একটি বয়ানও পাঠিয়েছে প্রতিটি দফতরকে। তাতে আর্থিক বছরগুলিতে প্রকল্প ধরে ধরে না-পাওয়া অর্থের তথ্য নথিবদ্ধ করতে হবে। সেই তথ্যই রিপোর্ট আকারে রাজধানী পৌঁছবে
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে।
অতীতে একাধিক বার বকেয়ার তথ্য কেন্দ্রের কাছে জমা দিয়েছিল রাজ্য। প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের মতে, এ বারের তথ্য চাওয়ার ধরন সেই তুলনায় বেশ আলাদা। যে ভাবে তথ্য চেয়েছে অর্থ দফতর, তাতে কোন আর্থিক বছরের কোন সময়ে প্রাপ্য অর্থ আসেনি, কতটা পরিমাণ টাকা বকেয়া, পরের আর্থিক বছরে আসা বরাদ্দের সঙ্গে বকেয়ার কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, ইত্যাদি সব বিষয়গুলিই নথিবদ্ধ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, আগামী সপ্তাহের দিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আলাদা ভাবে বৈঠক করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। যোগ দিতে পারেন নীতি আয়োগের বৈঠকে। সেখানে বাকি বিষয়গুলির সঙ্গে গুরুত্ব পাবে নাগরিকদের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ এবং সরকারি প্রকল্পগুলি প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মসৃণ পথ তৈরির উপরে। প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের অনেকের ধারণা, রাজ্যের বকেয়া চাওয়ার দাবি নীতি আয়োগের এই বিষয়বস্তুর সঙ্গে খুবই মানানসই। সেই কারণে রাজ্য প্রশাসনিক স্তরে এত তোড়জোড়।
অর্থ দফতর প্রত্যেক দফতরের কর্তাদের জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় অনুদানভুক্ত সব প্রকল্পের নাম নথিবদ্ধ করতে হবে, যে গুলিতে কেন্দ্রের অর্থ বকেয়া রয়েছে। ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত (অর্থাৎ, ওই দিন পর্যন্তই ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের হিসাব হয়) সেই বকেয়ার পরিমাণ জানানো ছাড়াও, পরের বছর কেন্দ্রের থেকে আসা অর্থের পরিমাণ জানাতে হবে। তাতে আগের বছরের বকেয়ার কোনও অংশ দেওয়া ছিল কি না, জানাতে হবে তা-ও। একই ভাবে ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে কেন্দ্রের থেকে পাওয়া অর্থ এবং বকেয়ার পরিমাণ তুলে ধরতে হবে রিপোর্টে। সব মিলিয়ে মোট কত টাকা বকেয়া রয়েছে, দফতরের আধিকারিকের সই-সহ লিখিত রিপোর্টটি পাঠাতে হবে অর্থ দফতরে। সব দফতরের থেকে এমন তথ্য পেয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করবে নবান্ন।
এক কর্তার কথায়, “প্রধানমন্ত্রীর হাতেই বকেয়ার তথ্য তুলে দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। নীতি আয়োগের বৈঠকেও সংশ্লিষ্ট একাধিক মন্ত্রকের মন্ত্রীরা থাকবেন। সেই সব মন্ত্রকের সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্যও তাঁদের হাতে পৌঁছে যেতে পারে।”
রাজ্যের কর্তাদের দাবি, সব চেয়ে বেশি বকেয়া রয়েছে গ্রামোন্নয়নে। একশো দিনের কাজ এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বরাদ্দ পুরোপুরি বন্ধ। একই তালিকায় রয়েছে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনাও। কেন্দ্রের ওই মন্ত্রকে আগের মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ বা সাধ্বী নিরঞ্জন এখন আর নেই। বরং তৃতীয় এনডিএ সরকারে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী হয়েছেন শিবরাজ সিংহ চৌহান। তাঁর সঙ্গে নতুন করে আলোচনা তৈরির একটা ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পরে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে যখন বরাদ্দ ছেড়েছে কেন্দ্র, তখন গ্রামোন্নয়নেও তেমন আশা করছে রাজ্য।