রাজ্য সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে অথচ ‘এড’ বা আর্থিক সহায়তা দেয়নি অনেক মাদ্রাসাকেই। এই ধরনের ‘আনএডেড’ মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়োগপত্র ও বেতন এবং অননুমোদিত সব মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি-সহ ন’দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন মাদ্রাসার হাজারখানেক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী।
রাজ্য মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সামনে বুধবার ওই অনশন মঞ্চে বসা শিক্ষকদের অভিযোগ, ২১ জুলাই ধর্মতলার সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষকদের সম্মান জানানোর কথা ঘোষণা করেছেন। অথচ রাজ্যে কয়েক হাজার মাদ্রাসা-শিক্ষক নিত্যদিন অসম্মানিত হয়ে চলেছেন। তার প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরের দিনই অনশনের ডাক দিতে বাধ্য হয়েছে আনএডেড মাদ্রাসা বাঁচাও কমিটি। সংগঠনের সভাপতি মহম্মদ কামরুজ্জামান জানান, দাবি না-মিটলে অনশন আন্দোলন চলবে।
সংগঠনের কার্যর্নিবাহী সভাপতি আব্দুল ওহাব বলেন, সংখ্যালঘু দফতরের পক্ষ থেকে বছর দুয়েক আগে বিভিন্ন জেলায় যে-নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছিল, জেলা স্তরের আধিকারিকেরা তা রূপায়ণ করছেন না। স্বীকৃতি দেওয়ার পরে আনএডেড মাদ্রাসাগুলিকে পরিকাঠামো উন্নয়নে ৫০ লক্ষ টাকা অনুদান, পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পালন করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে ৯৭ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। অথচ বাস্তব তা বলে না।’’ সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী ১০ হাজার মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু এ-পর্যন্ত স্বীকৃতি মিলেছে মাত্র ২৩৪টি মাদ্রাসার। ২৬০০টির স্বীকৃতির বিষয়টি নবান্নে ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে।
এ দিন অনশনরত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের মঞ্চে হাজির হয়ে সিপিএম নেতা আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘এই সরকার মুসলিম উন্নয়নের পক্ষে প্রচার চালালেও কার্যক্ষেত্রে তার কিছুই হচ্ছে না। সরকার সব স্কুলের শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছে। অথচ দরিদ্র পরিবার থেকে আসা আনএডেড মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বেতন দিতেই তাদের যত সমস্যা!’’
বিভিন্ন জেলা থেকে অনশন-মঞ্চে আসা শিক্ষকেরা জানান, বামেদের ৩৪ বছরের জমানায় সংখ্যালঘুরা তিমিরেই ছিলেন। সরকার পরিবর্তন হলেও সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন মোল্লা অবশ্য ওই সব মাদ্রাসা বা তাদের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ মানতে রাজি নন। তাঁর দাবি, ‘‘ওই সব মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় রাজ্য সরকার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়নি। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে টাকা আদায় করে প্রতিটি মাদ্রাসায় তিন জন শিক্ষকের বেতন দেওয়া হচ্ছে। খেলার মাঠ, গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা করতেও সচেষ্ট হয়েছে রাজ্য।’’