—প্রতীকী ছবি।
পরামর্শদাতা সংস্থার ‘খবরদারি’ নিয়ে ফের এক দফা আলোড়ন শুরু হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে। ভোটের পরে এ বার পঞ্চায়েতের তিন স্তরেই বোর্ড গঠনে প্রকাশ্যে তাদের ‘পরামর্শের’ বিরোধিতাও শুরু হয়ে গিয়েছে দলের একাংশে। দলীয় সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের বড় বাজেটের বিভাগগুলির দায়িত্ব কার হাতে থাকবে, তা নিয়েই এই বিরোধ তৈরি হচ্ছে।
দল বা দল পরিচালিত প্রশাসনিক সংস্থা পরিচালনায় পরামর্শদাতা সংস্থার সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের মতপার্থক্য নতুন নয়। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তা নতুন মাত্রা নিয়েছে। এই অবস্থায় দলেরই একাংশ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে যে, গ্রামীণ উন্নয়নে আর্থিক দিক থেকে ‘শাঁসালো’ দফতরগুলি নিয়ে পরামর্শদাতা সংস্থা মাথা গলাচ্ছে কেন? পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতি এবং জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মূলত পূর্ত দফতর নিয়েই একাধিক জায়গায় স্থানীয় নেতৃত্ব, দলীয় বিধায়ক এবং পরামর্শদাতা সংস্থার পছন্দে ‘মিল’ হচ্ছে না। এই রকমই এক জেলার সাগংঠনিক দায়িত্বে থাকা এক নেতার কথায়, ‘‘এ ভাবে চাপিয়ে দেওয়া হলে কাজই হবে না। যাঁরা ভোটে জিতলেন, তাঁরা যদি দায়িত্ব স্থির করতে না পারেন, তা হলে অশান্তি, জটিলতা হবে।’’
গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান থেকে শুরু করে জেলা পরিষদের সভাধিপতি, সব ক্ষেত্রেই তৃণমূলের পরামর্শদাতা সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নির্দেশ’ মেনে নিলেও গোল বেঁধেছিল গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে। কিছু জায়গায় কলকাতা থেকে পাঠানো নির্দেশ মানাও হয়নি।
এ বার নতুন করে সমস্যা তৈরি হয়েছে সমিতি স্তরে স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচন নিয়ে। জেলা স্তরের একাধিক নেতাই এ ক্ষেত্রে ওই সংস্থার পরামর্শ মানা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এক জেলা সভাপতির কথায়, ‘‘যে ভাবে পদাধিকারী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে, তা একেবারেই গণতান্ত্রিক নয়। দলের সিদ্ধান্তেই হোক। কিন্তু বোর্ড গঠন করতে বসে প্রশাসনিক কর্তাদের মাধ্যমে দলের সিদ্ধান্ত জানানোর মতো অগণতান্ত্রিক ও অসম্মানজনক ঘটনাও ঘটেছে।’’ তিনি পঞ্চায়েত সমিতির পদাধিকারী স্তরে হস্তক্ষেপের ‘পরামর্শ’ মেনে নিতে রাজিও হননি।
বিশেষ পদ নিয়ে এই টানাটানির মধ্যে ব্যতিক্রমও রয়েছে। দলেরই এক বিধায়কের কথায়, ‘‘আমার এলাকায় পরামর্শদাতা সংস্থা কোনও বিশেষ নাম বা নির্দেশ দেয়নি। আমাদের দেওয়া প্রস্তাব কার্যকর করেছে।’’ রাজ্য দলের এক নেতা অবশ্য ‘আলোড়ন’ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘দলের তরফে পরামর্শ তো থাকবেই। কারণ, দায়-দায়িত্ব দলের উপরেই আসে। তবে বিরোধের বিষয়টি সাধারণ চিত্র নয়।’’