বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। ফাইল চিত্র।
আবার বন্দে ভারত এক্সপ্রেস লক্ষ্য করে ইট ছোড়ার অভিযোগ উঠল। যদিও রেল তা স্বীকার করেনি।
এ বারে হুগলির চন্দনপুর স্টেশনের কাছে ঘটনাটি ঘটেছে বলে ট্রেনের যাত্রীদের একাংশ তো বটেই, চন্দনপুর এলাকার স্থানীয় কিছু মানুষও দাবি করেছেন। সোমবার সকালের এই ঘটনার আগে রবিবারও ‘আক্রান্ত’ হয়েছিল বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। সব মিলিয়ে উদ্বোধনের পরে চার বার ‘নিশানা’ করা হল ট্রেনটিকে। রবিবার সিউড়ি থেকে হাওড়াগামী হুল এক্সপ্রেসেও ঢিল ছোড়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
বার বার বন্দে ভারত ‘আক্রান্ত’ হওয়ায় যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও দানা বেঁধেছে। এ দিন শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ এবং সুকান্ত মজুমদার— রাজ্য বিজেপির তিন শীর্ষ নেতারই দাবি, আরপিএফ, জিআরপি এবং রাজ্য পুলিশ, সকলে মিলে ট্রেনটির নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা উচিত। রাজনীতিকে দূরে রেখেই সমস্যা সমাধানের পথ দেখা উচিত বলে মনে করে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসও। রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘ভারতীয় রেল ও তার সম্প্রসারণ তৃণমূলের ডিএনএ-তে রয়েছে। উদ্বোধনে গিয়ে তো সেই সদিচ্ছাই দেখিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।’’
এ প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ দেবের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, “ট্রেনে আগুন লাগানো, পাথর ছোড়া সবটাই শিক্ষার অভাব।” তিনি মনে করিয়েছেন, “এটা মোদী কিংবা দিদির ট্রেন নয়। এটা মানুষের ট্রেন। সাধারণ মানুষ যাবেন। যারা ঢিল ছুড়ছে, তাদের পরিবারও যাবে। এটা কিন্তু কোনও রাজনৈতিক বাহন নয়।” শিক্ষায় গুরুত্ব দিয়েই এই রকমের সমস্যা সমাধানে জোর দিচ্ছেন তৃণমূলের অভিনেতা-সাংসদ।
তবে পূর্ব রেল নিজে ট্রেনে পাথর ছোড়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ দিন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এ রকম কোনও খবর নেই। ট্রেনে পাথর ছোড়ার কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি।’’
এ দিন ভোর সাড়ে ছ’টা নাগাদ বন্দে ভারত এক্সপ্রেস যখন হুগলির চন্দনপুর ও পোড়াবাজার স্টেশনের মাঝে মাকালপুর ইস্ট এলাকা দিয়ে যাচ্ছিল, তখন ট্রেনটি লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। মান্না আচার্য নামে ট্রেনের এক যাত্রী বলেন, ‘‘চন্দনপুরের আশপাশে কিছু একটা আওয়াজ হল। সম্ভবত ঢিলের শব্দ। তখন ট্রেনে যে আরপিএফ জওয়ানেরা ছিলেন, তাঁরা বিষয়টি চন্দনপুরের ওসিকে জানান।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদেরও দাবি, রেললাইনের পাশের জঙ্গল থেকে কয়েক জন বড় পাথর ছুড়ে পালায়। এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে যান রেলের অধিকারিকেরা। সঙ্গে ছিল রেল পুলিশ। হুগলি জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, ‘‘জিআরপি-র তরফে বিষয়টি আমাদের জানানো হয়েছে। তদন্তে তাদের সাহায্য করা হবে।’’ রেল কর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, অন্য কোথাও থেকে পাথর ছিটকে আসার ঘটনা ঘটেছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে, রবিবার দুপুরে সিউড়ি থেকে হাওড়া আসার পথে হুল এক্সপ্রেস লক্ষ্য করেও ইট ছোড়া হয়। তাতে একটি কামরার জানলার কাচ ভেঙে যায় বলেও দাবি। এক যাত্রী ভাঙা জানলার ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে জানান, ‘‘বেলা আড়াইটে নাগাদ উখড়া স্টেশন ছেড়ে কিছুটা এগোতেই খোলা দরজা দিয়ে একটি পাথর উড়ে এসে বন্ধ দরজার কাচ ভেঙে দেয়।’’ পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক অমিতাভ চট্টোপাধ্যায় ঘটনাটি মেনে নিয়েও বলেন, ‘‘কেউ চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছুড়েছিল, না কি রেলের লাইনে থাকা পাথর ছিটকে এসেছিল, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’’
হঠাৎ করে ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার ঘটনাগুলি ভাবিয়ে তুলেছে মনোবিদদেরও। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মানসিক বিভাগের চিকিৎসক অমিতাভ দাঁ বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক কালে করোনা পরিস্থিতি-সহ নানা কারণে অনেক মানুষ আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তার পরে এমন ঝকঝকে ট্রেন চালু বা এই রকম ব্যবস্থা দেখে কিছুটা বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় কেউ কেউ এমন আচরণ করতে পারেন। ডাক্তারি পরিভাষায় একে ‘অ্যাক্টিং আউট বিহেভিয়ার’ বলা হয়। এ ক্ষেত্রেও তেমন কিছু ঘটে থাকতে পারে।’’