চাইল্ড লাইন থেকে খালি হাতে ফিরছেন শিশুর পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।
দু’দিন পরেও নিজের কোলের শিশুকে ফিরে পেলেন না বিরাটি স্টেশনে শিশুচুরি-গুজবে নিগৃহীতা মা! ঘটনার দিন, অর্থাৎ বুধবার রাতে ওই মহিলাকে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দিলেও ‘তদন্তের স্বার্থে’ শিশুটিকে চাইল্ড লাইনে পাঠিয়েছিল রেলপুলিশ (জিআরপি)। তার পর বৃহস্পতিবার কেটে গিয়েছে নানা টানাপড়েনে। শুক্রবার শিশুটিকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে চাইল্ড লাইনে গিয়েছিলেন মা-বাবা। কিন্তু ফের তাঁদের খালি হাতেই ফিরতে হল।
এ প্রসঙ্গে শিয়ালদহ রেল পুলিশের সুপার জে মার্সি বলেন, ‘‘আমরা আমাদের কাজ করেছি। শিশুটিকে চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দিয়েছি। এর পর বাবা-মা চাইল্ড লাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাচ্চাটিকে ফিরিয়ে নেবেন। এখানে আমাদের আর কোনও ভূমিকা নেই।’’
ছেলেধরা-গুজবের জেরে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। জায়গায় জায়গায় গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। সেই আবহে গত বুধবার শিশু চুরির অভিযোগে উত্তেজনা ছড়ায় বিরাটি স্টেশনে। স্থানীয় সূত্রে খবর, দত্তপুকুর থেকে শিয়ালদহগামী একটি ট্রেনে এক মহিলা যাত্রীকে দেখে সন্দেহ হয় অন্য যাত্রীদের। ওই মহিলা যাত্রীর কোলে এক শিশু ছিল। তা দেখে বাকি যাত্রীদের কোনও কারণে সন্দেহ হয়, শিশুটিকে হয়তো চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন ওই মহিলা যাত্রী। এর পরেই তাঁরা ওই মহিলা যাত্রীকে আটক করে রেল পুলিশের হাতে তুলে দেন। তার তদন্তে নেমে রেলপুলিশ জানতে পেরেছে, নিগৃহীতা মহিলাই ওই শিশুটির মা। তাঁর পরিবারকেও খবর দেওয়া হয়। ওই দিন রাতেই জিআরপিতে গিয়েছিলেন মহিলার স্বামী। রামেশ্বর পাণ্ডে নামে ওই ব্যক্তি পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তাঁর স্ত্রীর নাম বাসন্তী পাণ্ডে। বাসন্তীর আদি বাড়ি ওড়িশায়, রামেশ্বরের বিহারে। তাঁরা বামনগাছিতে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। ওই শিশুটি তাঁদেরই সন্তান।
জিআরপি সূত্রে খবর, পরিচয় যাচাইয়ের পরে বাসন্তীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু শিশুটিকে পাঠানো হয় চাইল্ড লাইনে। বুধবারের ঘটনার আতঙ্ক এখনও কাটেনি নিগৃহীত মহিলার। তিনি জানান, ওই দিন সকালে আট মাসের শিশুটিকে নিয়ে কলকাতার হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। বাসন্তী বলেন, ‘‘সঙ্গে থাকা ব্যাগটি কোলে রেখে তার উপরে ছেলেকে শুইয়ে কাপড়ে ঢেকে খাওয়াচ্ছিলাম। ট্রেন বিরাটি পৌঁছনোর আগে ও কেঁদে উঠতেই যাত্রীদের সন্দেহ হয়। তাঁদের অনেক বার করে বলি যে, শিশুটি আমার। কিন্তু কেউ শোনেননি। হঠাৎ আমাকে মারধর করা শুরু হয়। রাতে আমাকে ছাড়লেও বাচ্চাকে দেয়নি রেল প্রশাসন।’’ বামেশ্বরের জানান, কোলের শিশুকে ছাড়া খাওয়াদাওয়াই বন্ধ হয়ে গিয়েছে বাসন্তীর। তাঁর বক্তব্য, স্রেফ গুজব ও সন্দেহের বশে একজন মাকে শিশুচোর বলে ধরে নিয়ে মারধরের বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না। এই ঘটনা সমাজের পক্ষে লজ্জার এবং আতঙ্কের। যাঁরা এই জঘন্য কাণ্ড ঘটালেন, গুজব ছড়ালেন, তাঁদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।
পরিবার সূত্রে খবর, প্রয়োজনীয় নথি না থাকায় এখনও ছেলেকে ফিরে পাননি দম্পতি। বুধবার রাতে রামেশ্বর শুধু পুলিশকে সন্তান জন্মানোর পরে হাসপাতালের ডিসচার্জ সার্টিফিকেট দেখাতে পেরেছিলেন। এ প্রসঙ্গে রেলপুলিশের একটি সূত্রে খবর, নিয়ম অনুযায়ী, শিশুটিকে শিশু কল্যাণ সমিতির কাছে রাখা হয়েছে। সব নথি যাচাই হলেই তাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।