নিজস্ব চিত্র
বিএসএফের চোখরাঙানি ছিল। কাপড়া জালের অত্যাচার ছিল। তবু মাস পাঁচেক আগেও জলঙ্গির কাকমারির পদ্মা ছিল শান্ত। কেবল ওপারের ধীবরদের সঙ্গেই নয়, বিজিবির সঙ্গেও কথাবার্তা চলত এপারের মৎস্যজীবীদের। কখনও কখনও এপারের মৎস্যজীবী ওপারে, আবার ওপারের মৎস্যজীবী এপারের জলসীমা ভেঙে চলে আসতেন মাঝেমধ্যেই। কিন্তু মাস কয়েক আগের একটা সকাল বদলে দিয়েছে গোটা পদ্মার চেহারা। ভারতীয় মৎস্যজীবী প্রণব মণ্ডলকে বিজিবির হাত থেকে ফিরিয়ে আনতে গিয়েই গুলিতে নিহত হন এক বিএসএফ জওয়ান, আহত হন আরও এক জন।
আর এই ঘটনার পর থেকেই কাঁটাতারহীন সীমান্তে যেন একটা নতুন করে বেড়া উঠে গিয়েছে অলক্ষ্যে। এমনকি পদ্মার মাঝের যে জলসীমাতে ধীবরেরা অবাধে ভেসে বেড়াতেন সেখানেও তৈরি হয়েছে একটা দূরত্ব। মাঝপদ্মায় আর দেখা নেই নৌকার। এখন বাংলাদেশের ধীবরেরা আর সেখানে আসেন না মাছ ধরতে। ভারতীয় ধীবরেরাও নিজেদের এলাকার পদ্মাপাড়ে ডিঙি ভাসিয়ে মাছ ধরেন আতঙ্ক বুকে নিয়ে। শিরচরের ধীবর অনন্ত মণ্ডল বলছেন, ‘‘প্রায় ৪০ বছর ধরে পদ্মায় মাছ ধরছি। পদ্মাকে কখনও এ ভাবে ভাগ হতে দেখিনি। ’’
এলাকার মৎস্যজীবী থেকে বিএসএফের জওয়ানেরা জানাচ্ছেন, মাস চারেক আগেও পদ্মার এই জলসীমা নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না কোনও পক্ষের। যে কোনও সময় যে কোনও প্রয়োজনে এমনকি কুশল বিনিময়ের জন্যেও দু’দেশের ধীবর এবং সীমান্তরক্ষী জওয়ানেরা চলে যেতেন মাঝপদ্মায়। খুশির দিনে মিষ্টি বিনিময় থেকে পাশাপাশি নিজেদের স্পিডবোট দাঁড়িয়েও জওয়ানেরা গল্পগুজব করতেন বিজিবির সঙ্গে। আর এ পারের মৎস্যজীবীরাও হামেশাই ওপারে থাকা আত্মীয়দের সম্পর্কে জেনে নিতেন বাংলাদেশের ধীবরদের কাছ থেকে। কাকমারি ধীবর খাইরুল্লাহ শেখ বলছেন, ‘‘কোনও খবর দেওয়ার থাকলেও তাঁদের মারফত পৌঁছে দিতাম ওদেশে থাকা আত্মীয়ের বাড়িতে। তবে এত কম সময়ের মধ্যে পদ্মার চেহারা যে এ ভাবে বদলে যাবে তা কখনও ভাবতেই পারিনি।’’
কিন্তু এত কম সময়ের মধ্যে কী ভাবে বদলে গেল পদ্মা? মনের মাঝে অদৃশ্য বেড়া উঠল কী করে? ধীবরদের দাবি, মাস কয়েক আগে পদ্মার মাঝে যে গুলি চলেছিল তাতেই বদলে গিয়েছে সীমান্তের চেহারা। সপ্তাহ দুয়েক আগে কাকমারির আরও এক ধীবর পদ্মার জলে ডুবে যাওয়ায় পদ্মা নিয়ে ধীবরদের মনে এক নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।