Death

শিশুকন্যার পরে মিলল মায়ের দেহও

শনিবার বিকেলে অবশ্য গুটিয়ে ফেলা হয় তল্লাশির কাজ। তবে নদীতে নজরদারি চালাচ্ছেন গ্রামের মানুষজন।

Advertisement

বিমান হাজরা

সাগরদিঘি (ইংরেজবাজার) শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:৪০
Share:

মুর্শিদাবাদের কাবিলপুরে গঙ্গায় চলছে তল্লাশি। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

গঙ্গার জল থেকে শনিবার দুপুরে মিলল রেবিনাবিবির (২৩) মৃতদেহ। শুক্রবার যেখানে তাঁর শিশুকন্যা খাদিজা বানুর (৩) মৃতদেহ মিলেছিল, তার কিছুটা দূরেই এ দিন ডুবুরিরা খুঁজে পান রেবিনার দেহের। মাত্র ৩১ দিনের সায়ন ও ৬ বছরের জসিমের খোঁজ এখনও মেলেনি। শনিবার বিকেলে অবশ্য গুটিয়ে ফেলা হয় তল্লাশির কাজ। তবে নদীতে নজরদারি চালাচ্ছেন গ্রামের মানুষজন।

Advertisement

পারিবারিক বিবাদের জেরে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির ভূপেন্দ্রনগর গ্রামের বাসিন্দা রেবিনা তিন সন্তানকে নিয়ে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েছিলেন বলেই অনুমান করছে পুলিশ। তবে খুনের অভিযোগও উঠেছে। রেবিনার মা ফুলশহরি বেওয়ার কথায়, “ছেলেমেয়ে অন্ত প্রাণ ছিল রেবিনার। তাদের একটা চড়ও মারতে দিত না কাউকে। স্বামীর অত্যাচারে সে নিজে গঙ্গায় ঝাঁপ দিলে বিশ্বাস করতাম। কিন্তু রেবিনার মতো মা কখনও ছেলেমেয়েদের মারতে এ ভাবে জলে ঝাঁপ দিতে পারে না। তার স্বামী ওবাইদুরই তাদের জলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে ডুবিয়ে মেরেছে।” ওবাইদুর ও তার বাবা-মা পলাতক। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

শনিবারই উদ্ধার হওয়া দু’টি দেহেরই ময়না-তদন্ত হয়েছে জঙ্গিপুর পুলিশ মর্গে। দু’জনের জলে ডুবে মৃত্যু বলেই জানা গেছে ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে দাবি, শুক্রবার সকালে গঙ্গায় ঝাঁপ দেন রেবিনা। পুলিশের অবশ্য সন্দেহ, যে ভাবে যাই ঘটে থাকুক, শুক্রবার সকালে নয়, তা ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতেই। এই সন্দেহের প্রধান কারণ, এই ভরা শীতের সময় বেলা ১০টা নাগাদ জলে ঝাঁপ দিয়ে কেউ ডুবে গেলে দু’ঘণ্টার মধ্যে তাঁর দেহ জলে ভেসে ওঠার কথা নয়। তাই যা ঘটেছে, তা রাতেই ঘটেছে। সে ক্ষেত্রে স্বামী ওবাইদুর বৃহস্পতিবার রাতে প্রচণ্ড অত্যাচারের পরে রেবিনাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলে তিনি সন্তানদের নিয়ে ভাসুরের বাড়িতে রাতে আশ্রয় নেন বলে প্রথমে যা শোনা গিয়েছিল, তা নিয়ে পুলিশের গভীর সংশয় রয়েছে। পুলিশ রেবিনার ভাসুরের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত রেবিনার মা ফুলশহরী বেওয়া বা তাঁর বাপের বাড়ির কারও সঙ্গে পুলিশের কোনও কথা হয়নি বলে জানিয়েছেন রেবিনার মামা মনিরুল ইসলাম। যদিও ফুলশহরীর পরিবারের পক্ষ থেকে এ দিনও দাবি করা হয়, রেবিনা তাঁর তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে এক সঙ্গে নদীতে ঝাঁপ দিলেন কেমন করে? সন্দেহ করা হচ্ছে, রেবিনা তাঁর ৩১ দিনের শিশুকে হয়তো নিজের শরীরের সঙ্গে শাড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে অন্য ছেলে মেয়েদের দু’হাত ধরে জলে ঝাঁপ দিয়েছেন। কারণ এই শীতে জলে ঝাঁপ দেওয়া রেবিনার পক্ষে সম্ভব হলেও ৫ ও ৩ বছরের দুই শিশুর পক্ষে সম্ভব নয়। কাবিলপুরের ব্যস্ততম ঘাটের পাশেই এই ঘটনা ঘটেছে। সে ক্ষেত্রে দিনের বেলায় তা ঘটে থাকলে তা কারও না কারও চোখে পড়ার কথা। কাবিলপুরের এক মহিলা নাকি ঝাঁপ দেওয়ার ঘটনা প্রত্যক্ষও করেছেন। কিন্তু কে সেই মহিলা তার খোঁজ এখনও পায়নি পুলিশ।

তা ছাড়া, শ্বশুরবাড়ি ভূপেন্দ্রনগর থেকে কাবিলপুর ঘাটের দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। দিনের বেলায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে রেবিনা এতটা পথ গেলে, তা গ্রামবাসীদের নজরে পড়বেই। তা ছাড়া কাবিলপুরের ঘাটের ঘটনাস্থল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রেবিনার বাবার বাড়ি পুড়াপাড়া। দিনের বেলায় গিয়ে থাকলে তা নজরে আসত পাড়ার লোকেদের। তাই অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলেই ঘটনার নাগাল পেতে চাইছে পুলিশ। তাদের খোঁজে জোরদার তল্লাশি চলছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement