কুণাল ঘোষ। — ফাইল চিত্র।
কলকাতার পার্কিং ফি বৃদ্ধি নিয়ে জোর বিতর্ক হয়েছিল। এ বার বিতর্ক শুরু হয়েছে নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ) এলাকাকে ঘিরে। কলকাতার বির্তকের ক্ষেত্রেও সূত্রপাত হয়েছিল তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের সাংবাদিক বৈঠককে ঘিরে। আর এনকেডিএ নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে, তাঁরই একটি টুইটকে কেন্দ্র করে। এ ক্ষেত্রে তিনি লিখেছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে না জানিয়ে ট্রাফিক ফাইনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছিল। যা বাতিল করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার নিজের টুইটার হ্যান্ডলে কুণাল লেখেন, ‘‘নিউ টাউন বাজারে ট্রাফিক ফাইন ৫০০ টাকা যেটি এনকেডিএ চালু করেছিল, তা আপত্তিকর, বিভ্রান্তিকর ও জনবিরোধী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটি জানতেন না। মানুষের হয়রানির কথা জানতে পেরেই তাঁর নির্দেশে এই ফাইনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও বাতিল করা হচ্ছে।’’ কলকাতার বিতর্ক নিয়ে জবাব দিতে যে ভাবে এগিয়ে এসেছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম, এ ক্ষেত্রে অবশ্য এনকেডিএ কর্তৃপক্ষ প্রকাশ্যে এসে মুখ খুলতে চাননি। তবে এনকেডিএ-র একটি সূত্র জানাচ্ছে, আর্থিক জরিমানা করার কোনও ক্ষমতা তাঁদের হাতে নেই। এ ক্ষেত্রে যে ‘ফাইন’ বা জরিমানার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা এনকেডিএ থেকে নেওয়া হয়নি। যে হেতু ‘ফাইন’ বা জরিমানার সিদ্ধান্তের সঙ্গে তাঁরা যুক্ত নন। তাই এ ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে তাঁরা কোনও প্রতিক্রিয়া জানাবেন না।
প্রসঙ্গত, গত ১ এপ্রিল থেকে বর্ধিত পার্কিং ফি চালু করার কথা ঘোষণা করেছিল কলকাতা পুরসভা। সেই ঘটনায় তৃণমূলের অন্দরের মতানৈক্য প্রকাশ্যে এসে পড়ে। নতুন হারে প্রায় আড়াই গুণ বৃদ্ধি হয়েছিল পার্কিংয়ের খরচ। সেই বর্ধিত হারে পার্কিং ফি আদায় শুরুও হয়ে গিয়েছিল। পুরসভার তরফে ওই পদক্ষেপের পরেই প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে সে বারও আপত্তি তোলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল। তিনি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রীর ওই ফি বৃদ্ধিতে কোনও অনুমোদন নেই। অর্থাৎ, মুখ্যমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে ওই পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা কার্যকর করা হয়েছে। কুণাল আগ বাড়িয়ে এমনও বলে দেন যে, ওই দিনই কলকাতা পুরসভা ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেবে। ঘটনাচক্রে, তখনও মেয়র বিষয়টি নিয়ে কিছু বলেননি। কুণালের বক্তব্য জানার পর মেয়র ফিরহাদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে দলের অন্দরে বললেই ভাল হত। সাংবাদিক বৈঠক ডেকে না-বললেই ভাল হত। মেয়র এমনও বলেন যে, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে নির্দেশ দিলে তিনি বর্ধিত ফি প্রত্যাহার করে নেবেন। অতঃপর মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেন মেয়রের সঙ্গে। বিতর্ক এড়াতে মেয়র সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিতে রাজি হন। তার পর ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও তড়িঘড়ি বর্ধিত পার্কিং ফি প্রত্যাহারের বিজ্ঞপ্তি জারি করেন পুর কমিশনার। যাবতীয় বির্তকের ইতি হয় পার্কিং ফি প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই। তবে মেয়রের দফতর আবারও নতুন করে পার্কিং ফি বৃদ্ধির বিষয়ে ফাইল তৈরি করে তা পাঠিয়েছেন নবান্নে। এ বার মুখ্যমন্ত্রী সম্মতি দিলে বাড়ানো হবে শহরের পার্কিং ফি। কিন্তু এনকেডিএ-র বাজারে ট্রাফিক ফাইন আদায় নিয়ে কর্তৃপক্ষ দায় ঝেড়ে ফেলার পর তা কী ভাবে প্রত্যাহার করা হবে, তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, কলকাতার পার্কিং ফি বিতর্কের সময় কুণালের সঙ্গে সংঘাত হয়েছিল মেয়র ফিরহাদের। এ ক্ষেত্রে তাঁর দফতর পুর ও নগরোন্নয়নের অধীনেই রয়েছে এনকেডিএ। কিন্তু এই বিতর্কে এখনও তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।