(বাঁ দিকে) ইউসুফ পাঠান এবং হুমায়ুন কবীর (ডান দিকে)।। —ফাইল চিত্র
লোকসভা ভোটের পর থেকেই তাঁর দেখা নেই বহরমপুরে! তা নিয়ে বিরোধী শিবির তো বটেই, প্রশ্ন তুলছিলেন তাঁর দলের নেতারাই। প্রকাশ্যে ‘সরব’ হয়েছিলেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরও। ভোটের প্রায় দেড় মাস পর নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র বহরমপুরে ফিরে তারই জবাব দিলেন তৃণমূল সাংসদ ইউসুফ পাঠান। বললেন, ‘‘আমি নিখোঁজ নই!’’ স্পষ্ট জানিয়েও দিলেন, ভোটের আগে যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পূরণে তিনি দায়বদ্ধ।
বহরমপুরে এ বার কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীকে হারিয়ে সাংসদ হয়েছেন ইউসুফ। কিন্তু তৃণমূল তাঁকে প্রার্থী ঘোষণার করার পর থেকেই পাঠানকে ‘বহিরাগত’ বলে আক্রমণ শানিয়েছিলেন বিরোধীরা। দলের অন্দরেও ইউসুফকে ‘বহিরাগত’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল শুরুতে। তা করেছিলেন হুমায়ুনই। পরে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে বিষয়টির মিটমাট হয়। ভোটের প্রচারেও নেমেছিলেন হুমায়ুন। শেষমেশ ইউসুফ জেতেন। কিন্তু ভোটের পর সাংসদ এলাকায় না-আসায় সেই হুমায়ুনই আবার প্রশ্ন তুলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘নির্বাচনের ফলঘোষণার পরে ৫ তারিখ আমাদের সাংসদ গুজরাতে গিয়েছেন। তাঁকে এলাকার মানুষ ভোট দিলেন, কিন্তু তিনি ৫ তারিখের পরে আর এলেন না।’’ সাংসদের উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ভোট করে তাঁকে আমরা তো জিতিয়েছি। এ বার তো তাঁর নিজের এলাকায় এসে ঘোরা দরকার। মানুষের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে তাঁর কথা বলা দরকার। কিন্তু তিনি এখনও এলেন না। সাংসদ হিসেবে তাঁর এলাকায় দ্রুত আসা উচিত। তাঁর এখানে না আসার জবাবদিহি ভোটারদের কেন আমাদের দিতে হবে?’’
সাংসদ হলে এলাকার লোকজন ইউসুফকে কাছে পাবেন তো? ভোটের সময় এই প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা। ভোটের পর সাংসদ বহরমপুরমুখো না-হওয়ায় তাঁদের কথা সত্যি হয়েছে বলেও দাবি করতে শুরু করেছিলেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে বহরমপুরে ফিরে এ সবের জবাব দিলেন ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘‘আমি নিখোঁজ নই। আগেই বলেছিলাম, আমি যেমন রাজনীতিতে দায়বদ্ধ, তেমনই পরিবারের প্রতিও দায়বদ্ধ। ঠিক তেমনই খেলার প্রতিও দায়বদ্ধ। আমি খেলা করে এত বড় হয়েছি। তবে এখানকার সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার আছে। এখানকার মানুষের কাজ আটকে যেত দেব না।’’
ভোটের পর বহরমপুর ছেড়েছিলেন ইউসুফ। ২৫ জুন সংসদে শপথ নেন। এর পর তিনি ইংল্যান্ডে চলে যান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ খেলতে। পাকিস্তানকে হারিয়ে ‘লেজেন্ডস টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ’ চ্যাম্পিয়নও হয়েছে ভারত। সেই জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন পাঠান। তাঁর ব্যাট থেকেই এসেছিল ৩০ রানের ঝকঝকে ইনিংস, মাত্র ১৬ বলে। এর পর বুধবার সন্ধ্যায় তিনি বহরমপুরে ফিরেছেন। তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের সভায় তাঁর যোগ দেওয়ার কথা। তার আগে বৃহস্পতিবার তাঁকে জেলা তৃণমূলের তরফে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়। সেই মঞ্চ থেকে ইউসুফ বলেন, ‘‘ভোটের আগে আমি যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সেই সব প্রতিশ্রুতি পালনে আমি দায়বদ্ধ। স্পোর্টস অ্যাকাডেমি করার কথা বলেছিলাম, সেই সব বিষয়ে বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। জমি নেওয়ার জন্য কথা বলা হচ্ছে। এখানকার মানুষের জন্য যে কাজ করার কথা বলেছি, সেই কাজগুলি এ বার আমি করব।’’
ইউসুফ বহরমপুরে ফেরার পর তাঁকে সঙ্গে দেখা হয়েছে হুমায়ুনের। হুমায়ুন আনন্দবাজার অনলাইনকে জানান, তাঁদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। সমস্যা নিয়ে আলোচনাও করেছেন তাঁরা। তৃণমূল বিধায়কের কথায়, ‘‘ইউসুফ পাঠানকে অসুবিধার কথা জানিয়েছি। উনি আমার সঙ্গে সহমত। তবে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট থাকায় ওঁকে চলে যেতে হয়েছিল। সমস্যাটা উনি বুঝতে পেরেছেন। সাংসদ- পরিষেবায় যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তা মাথায় রেখে ২৪ ঘণ্টার লোক নিয়োগ করা হচ্ছে। আশা করি, সমস্যার সমাধান হবে।’’
বিরোধীরা অবশ্য তাঁদের আগের বক্তব্যেই অনড়। জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘এলাকায় আর উন্নয়ন হবে না। আমরা প্রথমেই বলেছিলাম, ইউসুফ পাঠান ক্রিকেটার। তাঁর নিজের জীবন রয়েছে। উনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন। জিতে ফিরে গিয়েছেন। তাঁকে খেলা চালাতে হবে। তাঁর কাছে আগে খেলা, পরে কাজ।” মুর্শিদাবাদ জেলা সিপিএমের সদস্য সন্দীপন দাস বলেন, ‘‘এমন একজনকে সাংসদ করে এলাকার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। উন্নয়নের কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে।’’