East Bardhaman

চোপড়ার মতো ‘সালিশি সভা’র ঘটনা পূর্ব বর্ধমানেও! মারধরের পর মমতাকে চিঠি লিখলেন প্রৌঢ় দম্পতি

গত রবিবারই উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় এক ‘সালিশি সভা’য় ডেকে যুগলকে রাস্তায় ফেলে পেটানোর অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। তার এক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় একই ধরনের অভিযোগ উঠল পূর্ব বর্ধমানে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

জামালপুর শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪ ১০:৪৭
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আবার ‘সালিশি সভা’। আবার আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে মারধর। আর এ বারও অভিযোগের তির শাসক তৃণমূলেরই এক নেতার বিরুদ্ধে!

Advertisement

গত রবিবার উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় এক ‘সালিশি সভা’য় ডেকে যুগলকে রাস্তায় ফেলে পেটানোর অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। তার একটি ভিডিয়োও প্রকাশ্যে আসে (ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। যে ভিডিয়োর কথা সংসদে উল্লেখ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তার এক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় একই ধরনের অভিযোগ উঠল পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানা এলাকা কুবাজপুর গ্রামে। তবে এখানে মারধর সালিশি সভায় হয়নি। অভিযোগ, সালিশি সভা ডাকার পর সেখানে উপস্থিত না হওয়ার জন্য বাড়িতে গিয়ে এক প্রৌঢ় ম্পতিকে মারধর করেন এলাকার তৃণমূল নেতার শাগরেদরা।

কুবজপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই দম্পতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে তাঁদের উপর হওয়া অত্যাচারের কথা জানিয়েছেন। তাঁরা লিখেছেন, ‘‘এলাকার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির ডাকা সালিশি সভায় না যাওয়ায় তাঁর শাগরেদরা বাড়িতে এসে মারধর করেছেন আমাদের। এমনকি, খুনের হুমকিও দিয়ে গিয়েছেন।’’ প্রাণের ভয়ে তাঁদের গবাদি পশু, ক্ষেত-খামার ফেলে পালিয়ে আসতে হয়েছে অন্যত্র। সে কথাও চিঠিতে লিখে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিহিত চেয়েছেন প্রৌঢ় দম্পতি। একই চিঠি ‘লিখিত অভিযোগ’ হিসাবে তাঁরা পাঠিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি, জেলার পুলিশ সুপার এবং জেলাশাসককে।

Advertisement

জামালপুর ব্লকের চকদিঘি পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম কুবাজপুর। ওই গ্রামের বাসিন্দা প্রৌঢ় দম্পতি শেখ বোরহান আলি এবং সাহানারা বিবি। তাঁদের সঙ্গেই থাকেন তাঁদের বড় ছেলে বসির আলিও। মূলত কৃষিকাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে পরিবারটি। অভিযোগ, বসিরের বিবাহ সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে একটি বিচারাধীন মামলার বিচার করতে সালিশি সভা ডেকেছিলেন এলাকার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি শেখ আজাদ রহমান। গত ১৪ জুন চকদিঘির তৃণমূল পার্টি অফিসে ডাকা ওই সালিশি সভায় উপস্থিত থাকতে বলা হয় ওই দম্পতি ও তাঁদের পুত্র বসিরকে। দম্পতি তাঁদের অভিযোগে লিখেছেন, ‘‘ রহমানের শাগরেদরা এ-ও জানিয়ে যায় যে, আমরা যদি আজাদ রহমানের বিচার সভায় হাজির না হই, তবে ওরা আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করে, বাড়ি জ্বালিয়ে দেবে। এমনকি, আমাদের প্রাণে মেরে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেয় ওরা।’’

বাঁ দিক থেকে, পুত্র বসির আলির সঙ্গে প্রৌঢ় দম্পতি সাহানারা বিবি এবং শেখ বোরহান আলি। —নিজস্ব চিত্র

প্রাণের ভয়েই সভায় না যাওয়ার মনস্থির করে পরিবারটি। বদলে জামালপুর থানায় তারা বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দায়ের করে। সেই দিন, অর্থাৎ ১৪ তারিখ রাতেই রহমানের শাগরেদরা ওই দম্পতির বাড়িতে চড়াও হন বলে অভিযোগ। লিখিত অভিযোগে দম্পতি জানিয়েছেন, ‘‘লাঠিসোঁটা এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে রহমানের ১২ জন শাগরেদ এবং আরও অনেকে বাড়িতে এসে হাজির হয়। তারা বলতে থাকে, আমরা শাসকের হয়ে শাসন করতে এসেছি। এর পরেই ওই দম্পতির পুত্র বসিরকে মারধর করতে থাকে তারা। বাধা দিতে গিয়ে মার খান প্রৌঢ় দম্পতিও। পরে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায় এবং বসিরকে বর্ধমান হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ওই ঘটনার পরেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানা কোনও পদক্ষেপ না করায় আতঙ্কে ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন তিন জনেই।

ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূলের চকদিঘির অঞ্চল সভাপতি আজাদ অবশ্য বলেছেন, ‘‘বসির আলির পরিবারকে আমি চিনি। তাঁদের যে মামলার বিচার আদালতে চলছে, তার বিচারের জন্য আমি কোনও বিচার সভা বা সালিশি সভা ডাকিনি। তবে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, বসিরের পরিবারের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটছে, তা গ্রাম্য বিবাদজনিত ঘটনা। ওই ঘটনার সঙ্গে ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার নাম জড়ানো হয়েছে।’’

জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “এমন কোনও ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। তবে আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখব। অভিযোগ সত্য হলে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।’’ জেলা পুলিশ সুপার আমন দীপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে’’ ।

চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীকে ওই দম্পতি জানিয়েছেন, প্রশাসন তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করলে তাঁদের আর বাড়ি ফেরা হবে না। পরে ওই দম্পতির পুত্র বসির বলেন, ‘‘ভবঘুরে হয়ে অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটছে আমাদের। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মায়েরও শরীর ভাল যাচ্ছে না। চাষের জমির ফসল জমিতে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এ ক্ষতি কোনও ভাবেই পূরণ হওয়ার নয়।’’ বসির জানিয়েছেন, এমন চলতে থাকলে তাঁদের সপরিবার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement