বাঁশবেড়িয়ার মা ক্যান্টিনে দুপুরে খাওয়ার ভিড়। নিজস্ব চিত্র।
নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি বাজার এবং ‘হকিং’ এলাকায় ‘মা ক্যান্টিন’ চালুর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নির্দেশ পাওয়ার পরেই ওই বিষয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে রাজ্য সরকারের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। ইতিমধ্যে প্রতিটি পুরসভাকে নিজ নিজ এলাকায় কতগুলি বাজার রয়েছে এবং সেখানে ‘মা ক্যান্টিন’ খোলার জায়গা রয়েছে কি না, তা দ্রুত জানাতে বলা হয়েছে।
পুর দফতর সূত্রের খবর, বছর খানেক আগে ওই দফতরের অভ্যন্তরীণ একটি সমীক্ষায় রাজ্যের পুর এলাকায় প্রায় ১,১০০ বাজার রয়েছে বলে জানা গিয়েছিল। কিন্তু তার পরে কোনও পুরসভা এলাকায় নতুন করে বাজার তৈরি হয়েছে কি না, তা জানতে চায় পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। সেই তথ্য হাতে পাওয়ার পরেই সংশ্লিষ্ট বাজার বা ‘হকিং’ এলাকায় ‘মা ক্যান্টিন’ খোলার বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে। ঘটনাচক্রে, রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম কলকাতা শহরের মেয়রও। তাই ফিরহাদও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে কলকাতা শহরে ‘মা ক্যান্টিন’-এর সংখ্যা বাড়াতে কলকাতা পুরসভার আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে চালু হয়েছিল ‘মা ক্যান্টিন’। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ওই ক্যান্টিনগুলি থেকে দুপুরবেলায় মাত্র ৫ টাকায় ভাত, ডাল ও ডিমের তরকারি দেওয়া হয়। অল্প সময়েই ওই ক্যান্টিন বেশ জনপ্রিয়ও হয়েছিল। প্রথমে মাত্র ৩২টি ক্যান্টিন নিয়ে চালু হয়েছিল ওই প্রকল্প। ২০২২ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে হয় ২১২টি। বর্তমানে রাজ্যে ‘মা ক্যান্টিন’-এর সংখ্যা ৩৩০টি। এর মধ্যে অনেক ‘মা ক্যান্টিন’ রয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। যেখানে নামমাত্র খরচে দুপুরের খাবার খেতে পারেন দরিদ্র মানুষ। মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের দিয়েই চালানো হয় ‘মা ক্যান্টিন’।
ওই ক্যান্টিন বাবদে খরচ করা অর্থ কোথা থেকে আসছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। যা নিয়ে তাঁর সঙ্গে তর্কযুদ্ধে জড়িয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রীরা। তবে ধনখড় রাজ্য ছেড়ে উপরাষ্ট্রপতি হয়ে দিল্লি চলে যাওয়ার পর থেকে ওই ক্যান্টিন নিয়ে আর কোনও বির্তক তৈরি হয়নি। তবে এ বার সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতিতে পুরসভা ও ‘হকিং’ এলাকায় ‘মা ক্যান্টিন’ শুরু করতে চাইছে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি দখলদার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে রাজ্যের পুর এলাকাগুলিতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে প্রলেপ দিতেই মুখ্যমন্ত্রী ‘মা ক্যান্টিন’ প্রকল্পটি আরও বেশি পরিমাণে শুরু করতে চাইছেন বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশ। কিন্তু পুর দফতরের আধিকারিকরা চাইছেন, যাবতীয় তথ্য হাতে আসুক। তার পরে জুলাই মাস থেকেই এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ করা হতে পারে।