গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
নবীন-প্রবীণ বির্তক চলছেই শাসক তৃণমূলের অন্দরে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের বয়স, নতুন-পুরনো তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিবিরের মধ্যে ‘দ্বন্দ্বের’ মতো বিষয় দলের অভ্যন্তরেও আলোচ্য হয়ে উঠেছে। দলে অভিষেকের উত্থানের আগে যাঁরা মমতার সঙ্গে থেকে তৃণমূলের মাথায় ছিলেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই বর্তমানে অভিষেকের ঘনিষ্ঠ মহলের ‘দ্বন্দ্ব’ও চর্চার অন্যতম বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দ্বন্দ্ব কখনও কখনও প্রকাশ্যেও এসেছে। কখনও আবার বদলে গিয়েছে ‘সুর’। এই পরিস্থিতিতে একটি ব্যাপারে এসে মিলে গেলেন দলের নবীন সাংসদ অভিষেক এবং প্রবীণ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়!
দলের অন্দরে এই দুই সাংসদের মধ্যে সম্পর্ক ‘সর্বজন বিদিত’! বছর দেড়েক আগে ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’ নিয়ে প্রকাশ্যেই ‘বিবাদে’ জড়িয়েছিলেন অভিষেক এবং কল্যাণ। দলীয় সূত্রে খবর, পরে সেই সম্পর্ক খানিক ‘ভাল’ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সাম্প্রতিক নবীন-প্রবীণ বিতর্কে সেই সমীকরণ ফের ঘেঁটে যাওয়ার কথা। এমন আবহে আবারও আলোচনায় উঠে এলেন দু’জন। পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ পুলিশ জেলা হিসাবে সম্প্রতিই পুরস্কৃত হয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংসদীয় কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবার। সেই স্বীকৃতি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। এ বার কল্যাণের শ্রীরামপুর কেন্দ্রীয় সরকারি স্বীকৃতি পেল। দেশের তিন সেরা থানার মধ্যে শ্রীরামপুর থানাকেও রাখল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট মন্ত্রক।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ একটি স্বশাসিত সংস্থা প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন থানা নিয়ে সমীক্ষা করে। সেই সমীক্ষার রিপোর্টই প্রকাশ্যে এসেছে। বৃহস্পতিবার শ্রীরামপুর থানাকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে যে, তারা দেশের সেরা তিনটি থানার মধ্যে একটি। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগি বলেন, ‘‘বেশ কিছু দিন আগে এই সমীক্ষা করা হয়েছিল একটি সংস্থার তরফে। তাদের সমীক্ষায় বেশ কয়েকটি নিয়মের কথাও বলা হয়েছিল। তার মধ্যে জনগণকে পরিষেবা দেওয়া, মানুষের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক, থানা চত্বর কতটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং কতটা উন্নত পরিষেবার মাধ্যমে জনগণের কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পেরেছে পুলিশ, তা-ও এই সমীক্ষার অংশ ছিল। দেশের তিনটি সেরা থানার মধ্যে এ রাজ্যের একমাত্র সেরা থানা হওয়ায় খুশি চন্দননগর পুলিশ।’’ পুলিশ কমিশনার জানান, আগামী ৫ জানুয়ারি জয়পুরে পুরস্কার দেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
অন্য দিকে, অপরাধের হার আগের থেকে অনেক কমে যাওয়ার কারণে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলাকে স্বীকৃতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। এ নিয়ে নিজের এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) উচ্ছ্বাস প্রকাশও করেছিলেন অভিষেক। তিনি লিখেছিলেন, ‘‘একটি চমৎকার খবর ভাগ করতে পেরে আমি আনন্দিত। ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলাকে ২০২২ সালের জন্য ‘সেরার’ মুকুট দেওয়া হয়েছে!’’ অভিষেকের সংযোজন, ‘‘এটি আমাদের দলবদ্ধ ভাবে কাজ, সংকল্প এবং জনসচেতনতার নিদর্শন। তাই যাঁদের জন্য এটা সম্ভব হয়েছে, সেই সমস্ত মানুষকে আমি আমার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’’
একটা সময় অভিষেকের সঙ্গে কল্যাণের সম্পর্ক নিয়ে জোর আলোচনা এবং জল্পনা চলেছিল তৃণমূলের ভিতরে-বাইরে। সেই জল্পনার নেপথ্যে ছিল কল্যাণেরই কিছু মন্তব্য। যেমন, ‘‘আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর কাউকে নেতা বলে মানি না।’’ কিংবা, কম জলঘোলা হয়নি তাঁর ‘‘আগে ত্রিপুরা, গোয়া জিতে দেখান, তার পর নেতা মানব’’ জাতীয় মন্তব্য নিয়েও। সেই কল্যাণকেই দলের জনসংযোগ যাত্রার পর অভিষেকের ভূয়শী প্রশংসা করতে দেখা গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, জনসংযোগ যাত্রা যখন হুগলির শ্রীরামপুর লোকসভায় পৌঁছেছিল, তখন সাংসদ হিসেবে সক্রিয় হয়ে অভিষেকের পাশেও থেকেছিলেন তিনি। সম্প্রতি ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’র অভিযোগ নিয়ে দলের আন্দোলন-কর্মসূচিতেও অভিষেকের পাশেপাশেই দেখা গিয়েছে কল্যাণকে। তা সত্ত্বেও রাজনীতিতে অবসরের বয়স সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দুই নেতার মধ্যে মতভেদ থেকেই গিয়েছে। তা আরও প্রকাশ্যে চলে এসেছে নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের সভার পর। অভিষেক ও তাঁর ‘ঘনিষ্ঠেরা’ যখন রাজনীতিতে নির্দিষ্ট বয়ঃসীমা নিয়ে নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করছিলেন, সেই সময় উল্টো বিপরীত অবস্থানে থেকে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছিলেন দলের প্রবীণ সাংসদদের কেউ কেউ। ‘প্রবীণদের’ মধ্যে প্রকাশ্যে যাঁরা মুখ খুলেছিলেন, সেই তালিকায় কল্যাণ না থাকলেও আড়াআড়ি বিভাজন যে ঘটেছে, তা দলের অনেকেই অস্বীকার করেন না।