দমদমের ছাতাকলের শতাধিক ঝুপড়ি পুড়ে ছাই। —নিজস্ব ছবি।
দুপুর বারোটার আগে আচমকাই আগুন লাগে দমদমের ছাতাকল এলাকার এক ঝুপড়িতে। চোখের নিমেষে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। ঝুপড়ির এক একটা ঘর দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করে। দমকলকর্মীদের ঘণ্টা তিনেকের চেষ্টায় আগুন নিভলেও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিকেল চারটে নাগাদও ঝুপড়ির বিভিন্ন জায়গা থেকে সাদা ধোঁয়া বার হতে দেখা যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছেন দমদমের সাংসদ সৌগত রায়। অন্য দিকে, আগুনের খবর পেয়েই স্থানীয় বিধায়ক অদিতি মুন্সিকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিস্থিতির খোঁজখবর নেন তিনি।
শনিবার দুপুরে দমদমের ছাতাকল এলাকার এক বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। কী ভাবে এই আগুন লাগল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই পর পর বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গিয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডার ফেটেই এই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে অনুমান। বিস্ফোরণের কারণে আগুনের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই আগুনের গ্রাসে চলে যায় বস্তির একাধিক ঘর।
স্থানীয়দের কথায়, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন বাসিন্দারা। ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে ঝলসে গিয়ে বেশ কিছু গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। এখনও ওই বস্তির মধ্যে কেউ আটকে রয়েছেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন দমকলকর্মীরা। ঘটনাস্থলে রয়েছেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরা। পুলিশও রয়েছে সেই এলাকায়।
আগুন লাগার ঘটনা নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই খবর দেওয়া হয় দমকলে। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের ১০টি ইঞ্জিন। তবে বস্তির যেখানে আগুন লেগেছে, সেখানে পৌঁছতে পারেনি দমকলের ইঞ্জিন। বস্তির অদূরে বড় রাস্তা থেকেই পাইপলাইনের মাধ্যমে জল দিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করতে হয় দমকলকর্মীদের। ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয় দমকলকর্মীদের।
খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছন রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। এলাকায় ছিলেন দমদমের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায় এবং সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী। সুজিত বলেন, ‘‘আমি খবর পেয়েই এলাকায় এসেছি। ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে দমকলকর্মীদের।’’ পুনর্বাসনের আশ্বাস দেন সৌগত। তিনি বলেন, ‘‘দমকল তাদের মতো কাজ করেছে। আগুনে অনেকের ক্ষতি হয়েছে। অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে সরকারের তরফ থেকে।’’ আগুন লাগার কারণ তদন্ত করে দেখার দাবি জানিয়েছেন সুজন।
স্থানীয়দের কথায়, ওই ঝুপড়ির ১৩০টি ঘর আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে শতাধিক ঝুপড়িই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। মাথার উপর ছাদ হারালেন অনেকে। কোথায় থাকবেন, কী হবে— সেই সব প্রশ্নই ঘুরছে বস্তির বাসিন্দাদের মনে। সর্বস্ব হারিয়ে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।