Gangasagar Mela

সাগরে নিরক্ষরদের ত্রাতা গরু-হাতি-ময়ূর

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, প্রতি বারেই মেলায় এসে এ ভাবে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে অনেক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২০ ০৯:০০
Share:

গঙ্গাসাগরে পূণ্য লাভের আশায় পুণ্যার্থীরা।—ছবি এএফপি।

কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন?

Advertisement

‘‘কতে (কইতে) পারি না!’’

আশপাশে কী দেখছেন?

Advertisement

‘‘কয়েকটা দুকান। একটা বড় বাঁশের দরজা আসে (আছে)।’’

কত নম্বর দরজা?

‘‘কতে পারি না।’’

দেখুন ওই দরজার গায়ে নম্বরের পাশে কোনও ছবি আছে?

‘‘হ্যাঁ। একখান গরুর সবি।’’

ওই ছবি দেখেই পরে গোসাবার বাসিন্দা, বছর বাহাত্তরের কমলা হাঁসদাকে উদ্ধার করা গিয়েছিল গঙ্গাসাগরে। তার আগে পরিজনের খোঁজে মেলা-চত্বরে বৃদ্ধা ঘুরে বেড়িয়েছেন হন্যে হয়ে। তাঁর সঙ্গে মোবাইল ফোন ছিল। যে-প্লাস্টিকে ফোনটি মোড়া ছিল, তার মধ্যে সাদা কাগজে বাড়ির নম্বর-ঠিকানা লিখে দিয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। তা সত্ত্বেও কমলাদেবী আত্মীয়দের কাউকেই বোঝাতে পারেননি, তিনি কোথায় রয়েছেন। অগত্যা পরিবারের লোকজন মেলা-কর্তৃপক্ষের ঘোষণা কার্যালয়ে বিষয়টি জানান। শেষ পর্যন্ত ওই গরুর ছবি ধরেই উদ্ধার করা হয় কমলাদেবীকে। পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলনের পরে ফোকলা মুখে হেসে বৃদ্ধা বললেন, ‘‘নম্বর কতে পারি না। সবিটা কতে পেরেসিলাম।’’

আরও পড়ুন: বদলি কেন? জানতে চেয়ে উপরওয়ালাকে পাল্টা চিঠি নারদ তদন্তকারীর

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, প্রতি বারেই মেলায় এসে এ ভাবে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে অনেক। অনেক ক্ষেত্রেই হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তি বোঝাতে পারেন না, তিনি ঠিক কোথায় আছেন। মেলা-চত্বরের মূল ফটকগুলির উপরে নম্বর লিখে দিয়েও সুরাহা করা যায়নি। দেখা গিয়েছে, অনেকেই নম্বর পড়তে পারেন না। বিভিন্ন ধরনের পুণ্যার্থীর কথা মাথায় রেখে তাই এ বারেই প্রথম নম্বরের পাশাপাশি ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে গঙ্গাসাগরে। মেলার মূল পাঁচটি ফটকের এক নম্বরে লেখা ‘১’ সংখ্যার পাশে লাগানো হয়েছে হাঁসের ছবি। দু’নম্বর ফটকে তেমনই ‘২’-এর পাশে ঠাঁই পেয়েছে গরুর ছবি। তিন, চার ও পাঁচ নম্বর ফটকে যথাক্রমে ময়ূর, হরিণ ও হাতির ছবি রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন: বাসে ঠাসাঠাসি সিটে বসে সফর সাংসদের, প্রশংসা সোশ্যাল মিডিয়ায়

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার তথ্য-সংস্কৃতি আধিকারিক লিপিকা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পরিকল্পনাটা এসেছে মেলার সঙ্গে যুক্ত জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগের আধিকারিকদের কাছ থেকে। সেই অনুসারে ওই সব ছবি আনানো হয় চন্দননগর থেকে। রাতে সেগুলি দেখতে যাতে কোনও সমস্যা না-হয়, সেই জন্য পশুপাখির ছবিগুলিতে আলোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কাকদ্বীপ সাব-ডিভিশনের অতিরিক্ত ইঞ্জিনিয়ার তরুণ হালদার বলেন, ‘‘সাগরমেলায় পুণ্যার্থীদের কথা ভাবতে গিয়েই এই ছবির পরিকল্পনা আসে। অক্ষর না-চিনলেও ছবির সাধারণ পশুপাখি চিনবেন না, এমন মানুষ নেই।’’ জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, তিন দিনে নিখোঁজ হয়েছিলেন ১৬২২ জন। পুণ্যস্নান সেরে ফেরার পথে বৃহস্পতিবারেও হারিয়ে যান বেশ কয়েক জন। তবে অধিকাংশ পুণ্যার্থীকেই খুঁজে বার করা গিয়েছে। বাকিদের নিখোঁজের ব্যাপারটি দেখছে পুলিশ।

বুধবার দুপুরে মেলা-চত্বরে মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছিল, ‘‘ম্যালেরিয়ার মা যেখানেই থাকুন, কাছাকাছির গেটের ছবি দেখে কোনও স্বেচ্ছাসেবী বন্ধুকে বলুন। আপনার জন্য আপনার আত্মীয়েরা অপেক্ষা করছেন।’’ মেলা-কর্তৃপক্ষ জানান, মহিলাকে উদ্ধার করা হয় রাত সাড়ে ১০টার পরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement