উদ্যোগী বাঁকুড়া প্রশাসন

প্রজাপতি ডানা মেলবে শুশুনিয়ায়

রাজ্যের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র শুশুনিয়া পাহাড়ে এ বার ‘বাটারফ্লাই গার্ডেন’ গড়তে উদ্যোগী হল বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই বন্য প্রাণীদের নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও চালিয়েছেন মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালা।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:২৯
Share:

পাহাড় কোলে উড়ে বেড়াবে বাহারি প্রজাপতি। পর্যটকদের হাতের নাগালের মধ্যেই থাকবে তারা। মাঝে মধ্যে তাদের রঙিন পাখা ছুঁয়ে যাবে শরীরও। ইচ্ছে থাকলে করতে পারা যাবে ক্যামেরা বন্দিও।

Advertisement

রাজ্যের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র শুশুনিয়া পাহাড়ে এ বার ‘বাটারফ্লাই গার্ডেন’ গড়তে উদ্যোগী হল বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই বন্য প্রাণীদের নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও চালিয়েছেন মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালা। বৃহস্পতিবার ওই সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুশুনিয়া পরিদর্শন করেন তিনি। অসীমবাবু বলেন, “‘বাটার ফ্লাই গার্ডেন’ তৈরির জন্য পাহাড় কোলে আমরা দু’টি জায়গা চিহ্নিত করেছি। ওই সংস্থা পরিকল্পনার খসড়া তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে।”

বেসরকারি সংস্থাটির সম্পাদক অনির্বাণ পাত্র বলেন, “গত তিন বছর ধরে শুশুনিয়া পাহাড়ের পাখি ও প্রজাপতি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছি। এখানে বিচিত্র সব পাখি ও নানা প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। প্রজাপতিগুলি গোটা পাহাড় জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় সাধারণের নজরে আসে না।’’

Advertisement

কী ভাবে তৈরি হবে বাটারফ্লাই গার্ডেন? অনির্বাণবাবু জানান, তাঁদের প্রথমে প্রজাপতিগুলিকে চিহ্নিত জায়গায় নিয়ে আসতে চাইছেন। তারপরে সেখানে যাতে তারা থিতু হয়, সেই চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন, “এক ধরনের গাছে প্রজাপতি ডিম পাড়ে ও অন্য এক ধরনের গাছ থেকে তারা মধু সংগ্রহ করে। ওই দুই ধরনের গাছ প্রচুর পরিমাণে আমরা ওই জায়গায় লাগাবো। তাহলে প্রজাপতিদের ওই জায়গায় আনা সহজ হবে।’’ তিনি জানান, গাছ লাগাতে ও ‘বাটারফ্লাই গার্ডেন’ গড়তে যে পরিকাঠামো দরকার, তার খরচের হিসেব করা শুরু হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই পরিকল্পনার খসড়া জেলা প্রশাসনের কাছে তাঁরা পেশ করতে চলেছেন।

তাঁদের আশা, চলতি পর্যটন মরসুম থেকেই ‘বাটারফ্লাই গার্ডেন’ গড়ার কাজ শুরু হয়ে যাবে। তবে সম্পূর্ণ রূপে তা গড়ে তুলতে এক বছর সময় লাগবে বলেই জানাচ্ছেন তিনি। আগামী বছরে পর্যটন মরসুমে পর্যটকেরা শুশুনিয়ায় এসে পাহাড়ের সৌন্দর্যের পাশাপাশি বাটারফ্লাই গার্ডেনের মজাও নিতে পারবেন বলে জানাচ্ছেন তিনি। সে ক্ষেত্রে কেবল পর্যটকেরাই নয়, জীববিদ্যার ছাত্রছাত্রীরাও শুশুনিয়ায় এই প্রজাপতি উদ্যান গড়ে উঠলে উপকৃত হবেন। এলাকার পরিবেশেও এর প্রভাব পড়বে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

তবে শুধু পরিকাঠামো গড়ে দিলেই ‘বাটারফ্লাই গার্ডেন’ প্রজাপতিতে ভরে উঠবে, এমন ভাবা ভুল বলেই জানাচ্ছেন অনির্বাণবাবু। তিনি সাফ বলেন, “এই প্রকল্পকে সফল করতে সবার আগে দরকার স্থানীয় মানুষজনের পরিবেশ সচেতনতা।” অনেক সময় দেখা যায়, শুশুনিয়া পাহাড়ের গাছে আগুন লাগিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। পিকনিক স্পটে পড়ে থাকা নোংরা আবর্জনা বা ঝরা পাতা জড়ো করে অনেকে পাহাড় কোলে আগুন লাগিয়ে দেন। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাহাড়ের প্রকৃতির।

এ ছাড়াও পর্যটনের মরসুমে পাহাড় জুড়ে নোংরা আবর্জনা ফেলা, চড়ুইভাতি করতে আসা দলগুলির সাউন্ড বক্সের দাপাদাপি তো রয়েইছে। এ সবই বাটারফ্লাই বাগান গড়ার পরিপন্থী। ফলে শুশুনিয়ার পরিবেশকে আদৌ কতটা প্রজাপতি বাগান গড়ার যোগ্য হিসেবে গড়া যাবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েই যাচ্ছে।

যদিও মহকুমাশাসকের দাবি, চলতি পর্যটন মরসুম থেকে প্রশাসনিক কড়াকড়ির জেরে অনেকটাই ভোল বদলেছে শুশুনিয়া পাহাড় চত্বরের। তিনি বলেন, “সাউন্ড বক্স বাজানো নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুশুনিয়াকে প্লাস্টিক-মুক্ত এলাকা বলে ঘোষণাও করা হয়েছে। যত্রতত্র নোংরা আবর্জনা ফেলা রুখতে স্থানীয় পঞ্চায়েতের লোকজন নিয়মিত পরিদর্শন চালাচ্ছেন এলাকায়।”

তাঁর বক্তব্য, “এই বছর থেকেই শুশুনিয়ার পরিবেশ রক্ষায় কড়া হয়েছি আমরা। রাতারাতি হয়তো এত দিনের অভ্যাস বদলে ফেলা যাবে না। তবে ধাপে ধাপে বদল হচ্ছে অনেক কিছুই।” দরকার পড়লে প্রশাসন এলাকাবাসীদের পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসতে সচেতন করবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তবে স্থানীয়েরা অনেকেই জানাচ্ছেন, পাহাড়ের সবুজের ক্যানভাসে রঙিন প্রজাপতি ডানা মেললে, তাঁরাও খুশি হবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement