আলিমুদ্দিনে কংগ্রেস নেতারা। বাম ও কংগ্রেস এর জোটে বৈঠকে। -নিজস্ব চিত্র।
এত দিন আলোচনা চলছিল সংখ্যা নিয়ে। এ বার আসন ধরে ধরে রফার আলোচনায় বসল সিপিএম ও কংগ্রেস। জোট শিবির সূত্রের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত আলোচনা এগিয়েছে রাজ্যের ২৩০টি আসনে। তবে কোন আসনে কারা লড়বে, সেই ভাগাভাগি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এআইসিসি-র নেতারাও কলকাতায় এসে দলের বৈঠক করে দ্রুত জোটের প্রক্রিয়া শেষ করার বার্তা দিয়েছেন।
আসন-রফা নিয়ে দু’পক্ষের আগের বৈঠক হয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেসের দফতর বিধান ভবনে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে কংগ্রেস নেতারা রবিবার গিয়েছিলেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের রাজ্য দফতরে। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় অধীরবাবুর পাশে ছিলেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য ও দুই বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী এবং নেপাল মাহাতো। বৈঠক শেষে দু’পক্ষের নেতৃত্বেরই বক্তব্য, আসন ধরে ধরে জট কাটাতে সময় লাগছে ঠিকই। কিন্তু এই পথেই আসন-রফার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে।
সূত্রের খবর, সিপিএম নেতারা এ দিনের বৈঠকে জানিয়ছেন, আব্বাস সিদ্দিকীর ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টকে (আইএসএফ) তাঁরা কিছু আসন ছাড়তে চান। জোট চেয়ে আব্বাস বিমানবাবুকে চিঠিও পাঠিয়েছেন। কংগ্রেসও যাতে তাদের ভাগ থেকে আইএসএফ-কে কিছু আসন দেয়, তার জন্য অধীরবাবুকে অনুরোধ করেছেন বিমানবাবু, সূর্যবাবুরা। প্রদেশ সভাপতি তাঁদের বলেছেন, সিপিএম তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। আব্বাস কংগ্রেসকে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রস্তাব দিলে তাঁরা ভেবে দেখবেন। পরেও এই প্রশ্নে অধীরবাবু বলেছেন, ‘‘সভা-সমাবেশে জোটের কথা বললেও আব্বাসদের দিক থেকে আমরা কোনও আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাইনি। কংগ্রেসের নীতি অনুযায়ী, কোনও ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে সমঝোতা সম্ভব নয়। ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ মেনে তাঁরা কোনও প্রস্তাব দিলে আলোচনা হবে।’’ বৈঠকে বিমানবাবুরা অবশ্য জানিয়েছেন, আব্বাসদের দলের নীতি-পত্রে ধর্মনিরপেক্ষতা ও অনগ্রসরদের উন্নয়নের কথাই আছে।
বৈঠকের পরে বিমানবাবু বলেন, ‘‘আব্বাস চিঠি দিয়েছেন। কোনও সংখ্যা ওঁরা বলেননি। তবে কংগ্রেসকে এখনও চিঠি দেননি। ফোন করে ওঁদের বলেছি।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আসন ধরে আলোচনা হয়েছে। কিছু আসন রদ-বদলের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সবটা নিষ্পত্তি হয়নি। মোট ২৩০টা আসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে, ৬৪টি বাকি আছে। ওটা এ মাসের মাঝামাঝি সময় হবে। আলোচনায় কোনও তিক্ততার বিযয় নেই।’’ অধীরবাবুও বলেছেন, ‘‘আসন ধরে ধরে আলোচনায় সিপিএমের কিছু যুক্তি আছে, আমাদেরও নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি আছে। তাই একটু সময় লাগছে। শীঘ্রই আসন-রফার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে।’’
এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক জিতিন প্রসাদ, বি কে হরিপ্রসাদ, বিজয় ইন্দ্র সিংলা ও আলমগির আলম এ দিনই বিধান ভবনে বৈঠকে বসেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে। প্রদেশ নেতৃত্ব এআইসিসি-র নেতাদের আশ্বাস দিয়েছেন, ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আসন-রফা সম্পূর্ণ হবে। ঠিক হয়েছে, প্রতি জেলায় কংগ্রেসের কর্মী সম্মেলনে থাকবেন এআইসিসি-র নেতারা। কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরাও আসবেন বাংলায়। কংগ্রেস সূত্রের খবর, বৈঠকে দুই নেতা আব্দুস সাত্তার ও সর্দার আমজাদ আলি প্রশ্ন তুলেছিলেন আব্বাসদের হাত ধরা নিয়ে। তবে দলেই সেই বক্তব্য আমল পায়নি।